চাঁচল , ০৩ জুলাই : জলের তোড়ে ক’দিন আগেই ভেসে গিয়েছে নির্মীয়মান কাঠের ব্রিজ৷ ঘোর বর্ষায় নদী পারাপারের জন্য এখনও পর্যাপ্ত নৌকা নেই৷ তার ফল ভোগ করতে হল একদল গ্রামবাসীকে৷ মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হল প্রায় এক ঘণ্টা৷ শেষ পর্যন্ত ওপার থেকে নৌকা এসে সেই মৃতদেহ নিয়ে যায় শ্মশানে৷ আজ ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া ২ ব্লকের আড়াইডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের পীরপুর গ্রামে৷ এই ঘটনার কথা চাউর হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই এলাকায়৷
আড়াইডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে একমাত্র পীরপুর গ্রামটি কালিন্দ্রী নদীর ওপারে৷ গ্রামে হাজার দশেক বাসিন্দাকে প্রতিদিনের প্রয়োজনে নদী পেরিয়ে আসতে হয়৷ আগে কালিন্দ্রীর উপর প্রতি বর্ষায় বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হত৷ গত লোকসভা নির্বাচনের আগে সেখানে একটি কাঠের পাকাপোক্ত সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয় ৫৫ লক্ষ টাকা৷ এলাকার তৎকালীন সাংসদ মৌসম নূর নিজের কোটার টাকা থেকে সেই সেতু নির্মাণের জন্য ৩৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন৷ দক্ষিণ মালদার সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরিও তাঁর সাংসদ কোটা থেকে বরাদ্দ করেন ১০ লক্ষ টাকা৷ এছাড়া রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় ও মানিকচকের বিধায়ক মোত্তাকিন আলম নিজেদের বিধায়ক কোটা থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করেন৷ সেতু নির্মাণের বরাত দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গ অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনকে৷ কিছুদিন আগে সেতুর নির্মাণকাজও শুরু হয়৷ কিন্তু গত শনিবার কালিন্দ্রীর জলের তোড়ে নির্মীয়মান সেই সেতু ভেঙে পড়ে৷ এর জন্য নির্মাণকারী সংস্থাকেই দুষেছিল গ্রামবাসীরা৷ তাদের বক্তব্য, শুখা মরশুমে সেতুর কাজ করা উচিত ছিল৷ তা না করে নদীর জল যখন বাড়তে শুরু করে, তখন সেতু তৈরির কাজে হাত দেয় নির্মাণ সংস্থা৷ শুধু পীরপুর নয়, এই সেতুর উপর ভরসা করে রয়েছে পরাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের যোগনীগ্রাম, ব্রাহ্মণগ্রাম, সাহেবনগর প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দারাও৷ সেতু না থাকায় তাদের নৌকার উপরেই ভরসা করতে হয়৷ কিন্তু নদীতে নৌকাও পর্যাপ্ত নেই৷ ফলে সমস্যায় পড়তে হয় সবাইকে৷
আজ তারই খেসারত দিতে হয়েছে একদল গ্রামবাসীকে৷ আজ যোগনীগ্রামে এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়৷ সৎকারের জন্য নদী পেরিয়ে গোবরজন্না শ্মশানে মৃতদেহ নিয়ে আসছিল গ্রামবাসীরা৷ কিন্তু নদীর ঘাটে পৌঁছোতেই বিপত্তি৷ নৌকা নেই৷ শেষ পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা পর নৌকার দেখা মেলে৷ দেড় ঘণ্টা পর মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে আসা হয়৷ এক শ্মশানযাত্রী শম্ভু মণ্ডল বলেন, “মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা নদীর ঘাটে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল৷ তারপর নৌকার দেখা পাওয়া যায়৷ বর্ষা আসলেই আমাদের নদী পেরোতে সমস্যা হয়৷ এর আগে বাঁশের সাঁকো ছিল৷ কিন্তু কাঠের সেতু তৈরির কাজে হাত পড়ায় এবার সেই সাঁকোও নেই৷ এতে শুধু আমাদের গ্রাম নয়, সমস্যায় পড়েছে ৭-৮টি গ্রামের বাসিন্দারা৷ আমরা দ্রুত এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি৷” একই দাবি আরেক গ্রামবাসী বিপ্লব মণ্ডলেরও৷
বিষয়টি নিয়ে রতুয়া ২-এর বিডিও সোমনাথ মান্না বলেন, “নদীতে নৌকা চালানোর বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতি দেখাশোনা করে না৷ এক্ষেত্রে আমার কিছু বলার নেই৷ কিন্তু আমি যতদূর জানি, ওই ঘাটে নৌকা পারাপার করে৷ পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা দেখা হচ্ছে৷ এখনও আমি এনিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি৷ তবু বিষয়টি নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলব৷”