পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৩১ জুলাই:-জেলা থেকে অর্পিতা ঘোষ বিদায় হতেই ঘরে ফিরলেন বিপ্লব মিত্র। রাজ্য নেতৃত্বর কাছে দেওয়া বার্তা হিসেবেই শুক্রবার বিজেপি ছেড়ে ঘাসফুলে ফিরেছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের অন্যতম ডাকাবুকো নেতা বিপ্লব মিত্র। এদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জ্জীর হাত থেকে দলীয় পতাকা তুলে নিতেই অকাল দীপাবলির চিত্র ফুটে ওঠে গোটা দক্ষিন দিনাজপুর জেলায়। জেলার সদর শহর বালুরঘাট থেকে শুরু করে গঙ্গারামপুর, বুনিয়াদপুর সহ সর্বত্র তার অনুগামীরা বাজি ফাটিয়ে অভিনন্দন জানান বিজেপি ছেড়ে ঘরে ফিরে আসা বিপ্লব মিত্রকে। এদিন কলকাতায় তৃণমূল ভবনে বিপ্লব মিত্রের সাথে ঘাসফুলের পতাকা তুলে নিয়েছেন তার ভাই তথা গঙ্গারামপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রশান্ত মিত্রও। বিজেপি ছেড়ে ফের ঘাসফুল শিবিরে ফিরে আসা নেতাকে স্বাগত জানাতে মঞ্চে হাজির হতে দেখা যায় জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দাস ও প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি অর্পিতা ঘোষকেও। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিপ্লব মিত্রের এই দলবদলে গেরুয়া শিবির কিছুটা হলেও জোর ধাক্কা খেল বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল। যদিও তা মানতে নারাজ বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার।
সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, বিজেপি একটি সাংগঠনিক দল। মাত্র সামান্য দিনের জন্য দলে আসা একজন লোকের ফের দল ছেড়ে চলে যাওয়ায় কোন প্রভাবই পড়বে না। তার পরিবর্তে যদি কোন একজন বুথ সভাপতি দলত্যাগ করতো তবে দলের ক্ষতি হত।
উল্লেখ্য, দক্ষিন দিনাজপুর জেলার তৃনমুলের সভাপতি হিসেবে গত লোকসভা ভোটে দলনেত্রীকে তদানিন্তন বালুরঘাট লোকসভা আসনে অর্পিতা ঘোষকে পুনরায় প্রার্থী না করার আবেদন জানান বিপ্লব বাবু। যেক্ষেত্রে তার যুক্তি ছিল বহিরাগত অর্পিতার কাজ কর্মে জেলার মানুষ অসুন্তুষ্ট তাই এবারে মানুষ তাকে ভোট নাও দিতে পারে। ফলে হাতছাড়া হতে পারে বালুরঘাট আসনটি। কিন্তু সে সময় বিপ্লব মিত্রের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে অর্পিতা ঘোষকেই পুনরায় এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী করেন দলের সুপ্রীমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর অবশ্য বালুরঘাট আসনটি হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। আর তার পরেই ওই হারের জন্য বিপ্লব মিত্রকে দায়ী করে জেলা সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অর্পিতাকে জেলায় দলের দায়ীত্ব দেন রাজ্য নেতৃত্ব। যা নিয়ে বিপ্লব মিত্রের সাথে দলের মনোমালিন্য তৈরি হয়। এরপরেই কিছুটা অভিমানে দল ছেড়ে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি তে যোগ দেন বিপ্লব মিত্র। যেসময় তার হাত ধরে জেলার একাধিক নেতা বিজেপিতে চলে গেলেও পরবর্তীতে ফের তারা তৃণমূলে ফিরে আসে। এদিকে কংগ্রেস ঘরানার লোক হয়ে বিজেপিতে গিয়ে নিজেকে ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলেন না বিপ্লব। আর যার দরুন মাত্র কয়েক মাস পরেই তিনি বিজেপি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বাড়িতেই বসে পড়েন। যোগাযোগ শুরু করেন ফের তৃণমূলে ফেরার। যা নিয়ে জেলা জুড়েও শুরু হয় জোর জল্পনা। কিন্তু বাধা ছিল অর্পিতা ঘোষ। এদিকে বহিরাগত ও দল পরিচালনার কোন অভিজ্ঞতা না থাকার দরুন জেলায় দলের সাংগঠনিক অবস্থা ক্রমশই কঙ্কালসার হয়ে উঠেছিল। দলকে প্রশাসন মুখি করে তুলেছিলেন অর্পিতা ঘোষ যা জেলার মানুষ তো বটেই দলের অন্দর মহলেও এই নিয়ে অর্পিতার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছিল। যে খবর রাজ্যে পৌছাতেই শুরু হয় বিপ্লবকে ঘরে ফেরানোর আলোচনা। কিন্তু নিজের বেশকিছু শর্ত দলকে জানিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেন বিপ্লব। যার মধ্যে অন্যতম হিসাবেই অর্পিতাকে জেলা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ও তার পদ পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ায় রাজ্যের কাছে মুল দাবি ছিল বিপ্লবের। সভাপতির পদ থেকে অর্পিতাকে সরিয়ে কলকাতায় তুলে নিয়ে যেতেই গেরুয়া শিবির ছেড়ে এদিন বেরিয়ে এসেছেন বিপ্লব।
বিপ্লব মিত্র জানিয়েছেন, নেত্রীর নির্দেশে সকলকে নিয়ে চলে দলের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করাই তার লক্ষ্য। যার মাধ্যমে আগামীতে জেলার ছয়টি আসনই দখল করবে তৃণমূল কংগ্রেস।
বালুরঘাটের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রাজেন শীল জানিয়েছেন, জেলায় দল এতদিন অভিভাবকহীন অবস্থ্যায় ছিল। বিপ্লব মিত্র দলে ফিরে আসায় দল আবার পুর্বের শক্তি ফিরে পাবে জেলায়।