রায়গঞ্জ:—-রায়গঞ্জ থানার পুলিশ হেফাজতে মৃত বিজেপি কর্মী অনুপ রায়ের মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে রায়গঞ্জ থানার পাঁচ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করল ইটাহার থানার পুলিশ। পাশাপাশি পরিবারের দাবি মেনে আদালতের নির্দেশে শনিবার মৃতদেহের পুনরায় ময়নাতদন্ত হল রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। যদিও দ্বিতীয় দফায় বিজেপি কর্মী অনুপ রায়ের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পরেও সন্তুষ্ট নন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। পুলিশের বিরুদ্ধেই খুনের মামলা রুজু হওয়ায় উত্তর দিনাজপুর জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যশপ্রীত সিং জানিয়েছেন, মৃত যুবকের মা গীতা রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে রায়গঞ্জ থানার পাঁচ পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে ৩৬৩, ৩০২ ও ৩৪ আইপিসি ধারায় ইটাহার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
২ সেপ্টেম্বর বুধবার একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ ইটাহারের নন্দনগ্রামের বাড়ি থেকে অনুপ রায় নামে এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে। পুলিশ হেফাজতেই সেদিনই সন্ধ্যায় মৃত্যু হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় অসুস্থ অনুপের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে মৃত্যু ঘটেছে। পুলিশ তড়িঘড়ি রাতের অন্ধকারেই পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে অনুপ রায়ের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করে ফেলে। অনুপের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে মানতে পারেনি তাঁর পরিবার ও জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ লকআপে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে অনুপকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে রায়গঞ্জ তথা উত্তর দিনাজপুর জেলা। বিজেপির পক্ষ থেকে রায়গঞ্জ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ৩ সেপ্টেম্বর মৃত বিজেপি কর্মী অনুপ রায়ের মা গীতা রায় ইটাহার থানায় রায়গঞ্জ থানার পাঁচ পুলিশ অফিসার এস আই নীহার রঞ্জন দাস, এস আই মহম্মদ মুর্তুজা, এস আই প্রবীর ঘোষ, এস আই সন্দীপ চক্রবর্তী এবং এ এস আই উত্তম মোদকের বিরুদ্ধে তাঁর ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করার পাশাপাশি মৃতদেহের পুনরায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে ময়নাতদন্তের দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালতের নির্দেশ অনুসারে শনিবার মৃত বিজেপি কর্মী অনুপ রায়ের মৃতদেহ পুনরায় ময়নাতদন্ত হয় রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ময়নাতদন্তে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রায়গঞ্জ ব্লকের বিডিও রাজু লামা, ইটাহার থানার পুলিশ অফিসার ও মৃতের পরিবারের লোকজন এবং বিজেপির প্রতিনিধি। এদিকে মৃতের মা গীতা রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে রায়গঞ্জ থানার পাঁচ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধেও মামলা শুরু করেছে ইটাহার থানার পুলিশ। রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যশপ্রীত সিং জানিয়েছেন, রায়গঞ্জ থানার ঘুঘুডাঙা এলাকায় একটি ডাকাতির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই অপরাধের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে ইটাহারের বাসিন্দা অনুপ রায়ের নাম উঠে আসে। সেই কেসেই ২ সেপ্টেম্বর রায়গঞ্জ থানার পুলিশ অনুপ রায়কে ইটাহারের নন্দনগ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ বোধ করায় তাকে রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে সন্ধ্যায় সে মারা যায়। কিন্তু মৃত অনুপ রায়ের মা তাঁর ছেলের মৃত্যুর জন্য রায়গঞ্জ থানার পাঁচ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ইটাহার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ৩৬৩, ৩০২, ৩৪ আইপিসি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানালেন রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যশপ্রীত সিং। তিনি এও বলেন ইটাহার থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে তাদের দাবি মেনেপুনরায় ময়নাতদন্তের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপি সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ী। তিনি বলেন এটা আমাদের নৈতিক জয়, একজন পুত্রহারা মায়ের পাশে আমরা সুবিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছি সেক্ষেত্রে আমাদের জয় হয়েছে। তবে রায়গঞ্জ থানার যে পাঁচ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মী অনুপ রায়কে খুনের মামলা শুরু হয়েছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যাবস্থা করলে সাধারন মানুষের কাছে পুলিশের উজ্জ্বল ভূমিকা হবে। যদি অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা হয়, শাস্তির ব্যাবস্থা না গ্রহন করা হয় তাহলে বিজেপি আবার গনতান্ত্রিক আন্দোলনের পথে নামবে।