শীতল চক্রবর্তী , গঙ্গারামপুর , ১৫ অক্টোবর— লকডাউনের জের। সাংসারিক অনটনে ভিনরাজ্যে কাজে যাবার প্রস্তাব স্ত্রীর। শারীরিক অসুস্থতায় যেতে নারাজ স্বামী। আধপেটা খেয়ে দিনযাপন পরিবারের। ঘুমন্ত অবস্থায় গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী স্ত্রী। বাঁচাতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মৃত্যু স্বামীরও। ঘটনায় গুরুতর আহত সাত বছরের শিশুকন্যাও।বৃহস্পতিবার রাতে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরের ২/১ বেলবাড়ির হালদারপাড়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে মৃতদের নাম গৌরী রাজবংশী এবং নিত্য রাজবংশী। ঘটনায় আহত হয়েছে তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান কৃষনা রাজবংশীও। পুরো ঘটনার জেরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। পুলিশ মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে ঘটনার তদন্তে নেমেছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দীর্ঘ কয়েক মাসের টানা লকডাউনে কাজ হারিয়ে চরম আর্থিক অনটনে পড়েন পেশায় রিকশাচালক নিত্য রাজবংশী। রেশনের চাল আটা পেলেও তিন জনের পরিবারে অন্যান্য খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল স্বামী-স্ত্রী কে। আর যার জেরে একপ্রকার আধপেটা খেয়েই দিন কাটছিল অসহায় ওই দম্পতির। সাংসারিক অনটন ঘোচাতে স্বামী নিত্যকে ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়ার জন্য চাপ বাড়িয়েছিলেন স্ত্রী গৌরী রাজবংশী। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে কিছুদিন পর কাজে যেতে চেয়েছিলেন নিত্য বলে পুলিশ সুত্রের খবর। আর যাকে নিয়েই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ প্রায় চরম মাত্রায় পৌছেছিল। বৃহস্পতিবার রাতেও ওই ঘটনা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয় বলে দাবি প্রতিবেশীদের। সকলে শুয়ে পড়তেই ঘরের মধ্যে নিজের গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন গৌরী রাজবংশী। ঘুমের ঘোরে বিষয়টি টের পেয়ে স্ত্রীকে বাঁচাতে যান নিত্য। তার চিতকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আগুনে পুড়ে যাওয়া স্বামী-স্ত্রী কে স্থানীয় গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে একজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আহত স্বামী নিত্যকে বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত্যু হয় তারও।বিছানায় শুয়ে থাকা সাত বছরের শিশু কন্যাও এই ঘটনায় আহত হয়। হাসপাতালে চিকিৎসার পর বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
নিত্য রাজবংশীর বৃদ্ধা মা দিপালী রাজবংশী জানিয়েছেন, অর্থ রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারে অশান্তি চলছিল। যার কারণে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মঘাতী হয় তাদের বৌমা। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে তার নাতনি।
প্রতিবেশী সাধনা সরকার, আনন্দ রাজবংশীরা জানিয়েছেন, জেলাজুড়ে এমন হাজারো পরিবার রয়েছে যাদের কাজ হারিয়ে যাওয়ায় চরম অসহয়তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে। বেশকিছুদিন ধরে পরিবারটিতে অশান্তি চলছিল। জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের উচিত আর্থিক সাহায্য নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাছাড়া এমন ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
গঙ্গারামপুর থানার আইসি পূর্ণেন্দু কুমার কুন্ডু জানিয়েছেন, দুঃখজনক একটি ঘটনা সামনে এসেছে। পুলিশ মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।