গৌতম পাল, উত্তর দিনাজপুর:-বলি প্রথা বন্ধ হয়ে গেলো ঐতিহ্যবাহী শ্যামাপুজো গুলির মধ্যে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে বয়রা কালীবাড়িতে।সারাঁ বছর মঙ্গলবার ও শনিবার বলি হতো এবং কালিপূজার দিনে কয়েক শতাধিক বলি ছিলো প্রচীন কাল ধরেই।বিভিন্ন সময়ে দাবি উঠে বলি প্রথা বন্ধ করার।করোনা অতিমারির কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ধরে বলি বন্ধ রয়েছে।সেই সুযগেই বন্ধ করা হলো বলিদান প্রথা বয়রা কালীমন্দিরে। দীপাবলির আমাবস্যায় বয়রা কালীমাতার পুজোকে ঘিরে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে কালিয়াগঞ্জ শহরে। মায়ের অষ্টধাতুর মূর্তিতে সারা অঙ্গজুড়ে থাকে সোনার অলঙ্কার। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে মন্দির কর্তৃপক্ষ কিংবা ভক্তরা জানিয়েছেন, এখানে মা বয়রা কালীমাতার কাছে মানত করলে তা ফলে যায়। এরফলে মানত পুরন করতেই হাজার হাজার ভক্ত আসেন পূজো দিতে। কালিয়াগঞ্জের রাজনন্দিনী পূজোতে শোল,বুয়াল সহ পাচ রকমের মাছ ও পাচ রকমের সবজি দিয়ে মায়ের ভোগ হয়।মা খুব যাগ্রত। ভক্তদের মনস্কামননা নিয়ে আসে মা তার পার্থনা পূরোন করে।
কথিত আছে শ্রীমতি নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা আর বজরা নিয়ে দূর দূরান্ত থেকে বানিজ্য করতে আসতেন বনিকেরা। নৌকা নোঙর করে বিশ্রাম নিতেন নদীর ধারে জঙ্গলাকীর্ণ অরন্যে। সেখানেই বয়রা গাছের নীচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এক বনিক৷ দেবীর স্বপ্নাদেশ পান ওখানেই মূর্তি দিয়ে কালীপুজো করার৷ সেই বয়রা গাছের তলায় প্রথম পুজো শুরু হয় উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কালীমন্দির ” বয়রা কালীবাড়ি ” র পুজো। পরবর্তিতে কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দারা সেই জঙ্গল পরিস্কার করে তৈরি করে বাঁশ ও মাটির মায়ের মন্দির। এরপর ১৯৬২ সালে তৈরি হয় দেবীর নতুন মন্দির যা আজ বয়রা কালীমন্দির নামে বিখ্যাত। মায়ের মূর্তিও হয়েছে অষ্টধাতুর। দীপাবলির রাতের বয়রা কালীবাড়ির পুজোকে ঘিরে কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট সহ উত্তরবঙ্গের মানুষের আলাদা উন্মাদনা থাকে। কয়েক লক্ষ পূন্যার্থীর সমাগম ঘটে দীপাবলির রাতে। দুই-তিন হাজার পাঠাবলি হয়ে থাকে। কিন্তু? করোনা অতিমারি কারনে সরকারি বিধি মেনে সম্পূর্ণ রুপে বলি প্রথা বন্ধ আছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারন মানুষ দাবি করে এসেছে বলি প্রথা বন্ধ করতে । কারোও নিজের মনস্কামনা পুরনোর জন্য নিরীহ প্রাণীকে হত্যা করা ঠিক নয়। করোনা অতিমারি কারনে দীর্ঘদিন ধরে বলি প্রথা বন্ধ থাকায় সেই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে সকলের দাবি কে প্রাধান্য দিয়ে মন্দির কমেটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলিদান প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হলো।