ট্রেন থেকে পড়ে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু

0
332

ট্রেন থেকে পড়ে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু, দেহ ফেরাতে এগিয়ে এলেন হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়,শেষকৃত্যে দেখা গেল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ,কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার

হরিশ্চন্দ্রপুর;৩০অক্টোবর: লকডাউনে কাজ হারিয়ে ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার গড়গড়ি গ্রামের বাসিন্দা চন্দন মহলদার। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সবজি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছিল এলাকায়। কিন্তু লকডাউন ও করোনা মহামারী জেরে থমকে গিয়েছিল ব্যবসা। চড়া সুদে ঋণ দেওয়া টাকার কিস্তি টানতে পারছিল না। তাই সংসারের মুখে হাসি ফোটাতে আবার সাতদিন আগে পাড়ি দিয়েছিল ব্যাঙ্গালোরের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তিনদিন আগেই ট্রেন থেকে পড়ে সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশনের কাছে মৃত্যু হল হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা চন্দন চন্দন মহালদারের। তার মৃত্যুর খবর গ্রামে এসে পৌঁছতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয় পুলিশের তত্ত্বাবধানেই সেখানেই চন্দনের মৃতদেহ পোস্টমর্টেম করা হয়। কিন্তু সেখান থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর ফেরাতেই দেখা যায় সমস্যা। অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ আনতে খরচ পড়বে ৯০ হাজার টাকা। অতএব গ্রামবাসী হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এগিয়ে এলেন দরিদ্র দিনমজুর চন্দন মহালদারের মৃতদেহ নিজের গ্রামে ফেরাতে। অবশেষে চাঁদা তুলে টাকা যোগাড় করে ফেরানো হল চন্দনের মৃতদেহ। শনিবার চন্দনের মৃতদেহ বাড়িতে ফিরলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে গোটা গ্রাম। শেষকৃত্যে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকেই দেখা গেল চন্দনের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করতে। তার মুসলিম প্রতিবেশীরাই কাঁধে করে শ্মশানে নিয়ে গেলেন । এলাকার কর্মসংস্থানের অভাবের জেরে আরো এক পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্যে অকালে প্রাণ হারালো।

স্থানীয় সূত্রে খবর চন্দনের এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। সবাই নাবালক। দু’বছর আগে লকডাউনের মধ্যে বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছে চন্দনের বাবা অর্জুন মহলদার। বৃদ্ধা মা সারথি মহালদার হাটে হাটে ঘুরে সবজি বিক্রি করেন। জোটেনি কোন সরকারি সাহায্য। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ স্ত্রী ও। এই অবস্থায় ধার দেনা করে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করে লকডাউনের মধ্যে সবজির ব্যবসা শুরু করেছিল চন্দন মহালদার। কিন্তু লকডাউন এ ব্যবসা মার খেয়েছিল। তাই বাধ্য হয়ে আবার ভিন রাজ্যে ফিরে গিয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস কাজে যোগ দিতে যাওয়ার পথে ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হল দরিদ্র দিনমজুর চন্দন মন্ডলের। চন্দনের মৃতদেহ গ্রামে আসলেও দেখা যায়নি কোনো জন-প্রতিনিধিকে। এই নিয়ে ক্ষোভ জমেছে এলাকায়।

স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান এলাকায় কাজ নেই। তাই বাইরে গিয়ে এলাকার অনেক ছেলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছেন। একের পর এক শ্রমিকের ভিন রাজ্যে মৃত্যু ঘটছে। একই ভাবে আজ আমাদের গ্রামের ছেলে চন্দন মহালদারের মৃত্যু ঘটলো। আমরা চাইব প্রশাসন এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াক। ওর মৃতদেহ ব্যাঙ্গালোর থেকে আনতে ৯০ হাজার টাকা লেগেছে। আমরা গ্রামবাসী হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এগিয়ে এসে এই টাকা সবাই মিলে উঠিয়েছি। প্রশাসনের উচিত এলাকায় কর্মসংস্থান বাড়ানো যাতে এলাকার মানুষ কে ভিন রাজ্যে কাজ করতে না যেতে হয়।

চন্দনের স্ত্রী প্রতিমা মহলদার জানালেন দু’বছর ধরে কোন কাজ নেই। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদের টাকা নিয়ে তাই সবজির ব্যবসা শুরু করেছিল এলাকাতেই। কিন্তু লকডাউনে ব্যবস্থা মার খেয়েছিল। সুদের কিস্তি চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আমার স্বামী আবার ভিন রাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই যাওয়াটা যে শেষ যাওয়া হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। তিনটি ছোট ছোট নাবালক সন্তান নিয়ে পথে দাঁড়াতে হবে।

চন্দনকে শেষ দেখা দেখতে এদিন তার বাড়ি তে ভেঙে পড়েছিল গোটা গ্রাম। শেষকৃত্যে বিদায় জানাতে এগিয়ে এসেছিল প্রতিবেশী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। চন্দন কে তারাই কাঁধে করে শ্মশানে নিয়ে গেলেন। হরিশ্চন্দ্রপুরে এমন শোকের পরিবেশের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির ফুটে উঠল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here