কুসংস্কারে ডুবে হিলির তিওড়ের মালীপাড়া, সাপ কামড়াবার পর ঝাড়ফুঁক করে সময় নষ্ট, হাসপাতালে আনবার পরেই মৃত্যু চারবছরের শিশুর।
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৬ জুলাই——— কুসংস্কার! সচেতনতার অভাবে ডুবে আস্ত গ্রাম। সাপে কাটার পরে ঝাড়ফুক করতে গিয়ে সময় নষ্ট, হাসপাতালে আনতেই মৃত্যু চার বছরের শিশুর। শুক্রবার রাতে এই ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। চলে পুলিশের সাথে মৃত শিশুর পরিবারের লোকেদের ধস্তাধস্তিও। বিক্ষোভকারী শিশুর পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, সঠিক সময়ে হাসপাতালে এনেও শিশুর চিকিৎসা হয়নি। আর তাই মৃত শিশুর ময়নাতদন্ত না করে তারা দেবি মনসার কাছে নিয়ে যাবেন, এই দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন হাসপাতালে। যে খবর পেয়ে বালুরঘাট থানার পুলিশ এলাকায় পৌছাতেই তাদের সাথে ধস্তাধস্তি চালায় মৃত শিশুর পরিবারের লোকেরা। পুলিশ জানিয়েছে মৃত ওই শিশুর নাম দ্বীপ মালি(৪)। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি থানার তিওরের মালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। শুক্রবার বিকেলে বাড়ির আশেপাশে খেলা করার সময় আচমকা ওই ছোট শিশুটিকে সাপে কামড় দেয়। বিষয়টি নজরে আসতেই পরিবারের লোকেরা প্রথমে তাকে স্থানীয় এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। যেখানে বেশকিছু সময় নষ্ট করবার পর শিশুটি সুস্থ না হওয়ায় কবিরাজের পরামর্শ মতো তড়িঘড়ি বালুরঘাট হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করে চিকিৎসক। শুরু হয় ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া। এদিকে গ্রাম থেকে ওই শিশুর পরিবারকে টেলিফোনে জানানো হয় অতিদ্রুত শিশুটিকে বিষহরি মন্দিরে নিয়ে যাবার জন্য। যেখানে গেলেই মৃত শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে। যার পরেই শিশুটিকে ময়না তদন্ত না করিয়ে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার দাবী করে পরিবারের সদস্যরা। তাতে বাধা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি পুলিশ আটকাতে গেলও পুলিশের সঙ্গে প্রথমে বচসা ও পরে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন মৃতের পরিবার পরিজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় বালুঘাট থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক হয়েছে পরিস্থিতি।
মৃত শিশুর বাবা দিলীপ মালী বলেন, সঠিক সময়ে হাসপাতালে এনেও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা করাননি চিকিৎসকেরা। তার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হোক। তারা বিষহরি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে মৃত ছেলেকে একবার বাচিয়ে তুলবার শেষ চেষ্টা করবেন।
মৃত শিশুর মামা সুরজিত মালী বলেন, সাপে কামড়াবার পরেই ভাগ্নেকে কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। সেখান থেকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করবার পরেও মৃত্যু হয়েছে তার। ঘটনার পরেই গ্রামের লোকেরা ওই সাপটিকে মেরে কৌটা বন্দী করেছেন। তাদের ছেলেকে বিষহরির কাছে নিয়ে যাবার জন্য একবার ছেড়ে দেওয়া হোক। সেখানে গেলেই সে বেচে যাবে এমনই বিশ্বাস তাদের।