পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ২৩ জুলাই ————- স্কুলের ভেতরে ঢুকে শিক্ষিকাকে বিবস্ত্র করে পেটানোর ঘটনাকে ঘিরে ছাত্র বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠলো হিলির ত্রিমোহিনী। চলল জাতীয় সড়ক আটকে বিক্ষোভ। ভাঙচুর করা হয় প্রধান শিক্ষকের গাড়িও। শনিবার সকাল থেকে এই ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় হিলিতে। পরিস্থিতির চাপে পড়ে ৫ অভিযুক্তর বিরুদ্ধে হিলি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হন প্রধান শিক্ষক।
বৃহস্পতিবার ত্রিমোহিনী প্রতাপ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষিকা চৈতালি চাকি তার স্কুলের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কান ধরে ও পিঠে একটি চড় দিয়ে তার ভুল কাজের শিক্ষা দেন। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। স্কুল শিক্ষিকা কেন মারবে? এমন অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার সদলবলে হাজির হন ওই ছাত্রীর পরিবারের লোকেরা। শিক্ষক রুমে প্রবেশ করে সহ শিক্ষিকা চৈতালী চাকি কে প্রায় বিবস্ত্র করে পেটান ওই ছাত্রীর পরিবারের লোকেরা। এখানেই শেষ নয়, ওই স্কুল শিক্ষিকার গলা কেটে স্কুল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবার হুশিয়ারিও দেয় ওই অভিযুক্তরা বলেও অভিযোগ। শুক্রবার যে ঘটনার পর কিছুটা ভীতও হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক সহ স্কুলের প্রায় সকল শিক্ষকই। ওইদিনই তড়িঘড়ি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে একটি সমঝোতার মিটিংও সেরে ফেলেন নিজেরা। যাকে ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্কুলের অনান্য ছাত্র ছাত্রী সহ প্রাক্তনরাও। শনিবার সকাল থেকে যার প্রতিবাদে রাস্তায় নামে সকল ছাত্র ছাত্রীরা। ত্রিমোহিনী জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করে রাস্তা অবরুদ্ধ করেন ছাত্র ছাত্রীরা। পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে চলে বিক্ষোভও। যার মাঝে গাড়ি নিয়ে স্কুলে ঢুকতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন প্রধান শিক্ষকও। চলে তার গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনাও। যদিও পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারী দের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন প্রধান শিক্ষক। বিক্ষোভকারী ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি নক্কার জনক এই ঘটনায় অবিলম্বে ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে হবে প্রধান শিক্ষককে। একইসাথে পুলিশকেও অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে ওই অভিযুক্তদের। যার প্রতিবাদেই এদিন সোচ্চার হয়েছেন প্রায় সকল ছাত্র ছাত্রীই। পরিস্থিতির চাপে পড়ে পাচ অভিযুক্তর বিরুদ্ধে এদিন হিলি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রধান শিক্ষক কমল কুমার জৈন। আর যারপরেই স্বাভাবিক হয়েছে পরিস্থিতি।
বিক্ষোভকারী ছাত্রী প্রত্যুষা মন্ডল বলেন, শিক্ষিকা তাদের শাসন করবেন এটাই চান তারা। কিন্তু তাদের চোখের সামনে যেভাবে শিক্ষিকাকে মারা হয়েছে তা তারা মেনে নিতে পারেননি। অবিলম্বে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করুক।
প্রাক্তন ছাত্র দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, স্কুলে ঢুকে শিক্ষিকাকে বিবস্ত্র করে মারবার পরে কিভাবে মীমাংসা হয়। তারা চান অভিযুক্তদের কঠোর সাজা।
প্রধান শিক্ষক কমল কুমার জৈন বলেন, সহ শিক্ষিকার সাথে যে ঘটনা হয়েছে তা কখনই মেনে নেওয়া যায়না। ঘটনার পর থেকে শুধু আক্রান্ত শিক্ষিকাই নন, তারা নিজেরাও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। ছাত্র ছাত্রীদের দাবি যুক্তিসঙ্গত। তবে স্কুলের সকল শিক্ষকরা মিলে যা সিদ্ধান্ত নেবে তিনি সেটাই করবেন।