তৃণমূল সুপ্রিমোর নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে বালুরঘাটে দলের কর্মসূচি নিয়ে বাড়বাড়ন্ত প্রদীপ্তার। দলীয় নির্দেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে সরব খোদ তৃণমূল সভাপতিও
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১০ নভেম্বর ———— তৃণমূল সুপ্রিমোর নিষাধাজ্ঞা উড়িয়ে দলীয় অনুষ্ঠান নিয়ে ফের বালুরঘাট শহরে প্রদীপ্তার বাড়বাড়ন্ত। কড়া হুশিয়ারি জেলা তৃণমূল সভাপতির। শুক্রবার পুরসভার সুবর্ণতটে একটি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রদীপ্তার বিরুদ্ধে দলীয় নির্দেশ না মানবার অভিযোগ এনেছেন খোদ তৃণমূল সভাপতি। যাকে ঘিরেই রীতিমতো শোরগোল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বালুরঘাট শহরজুড়ে। দলীয় নির্দেশ অমান্য করে কিভাবে বারংবার দলের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন ওই প্রাক্তন মহিলা নেত্রী তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ দলের কর্মীদেরই একাংশ। শুধু তাই নয়, দলীয় নির্দেশ অমান্য করবার পরেও কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে না দল, সে প্রশ্ন তুলেও সরব হয়েছেন কর্মীদের একাংশ। বৃহস্পতিবার শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের আন্দোলনের পুরোভাগে থেকে ওই প্রাক্তন মহিলা নেত্রীকে নেতৃত্ব দেবার ছবি সামনে আসতেই রীতিমতো হইচই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে খোদ নেতৃত্বদের একাংশের মধ্যে। যদিও নিজের ব্যস্ততার কারণে এব্যাপারে কোন বক্তব্য দিতে চাননি প্রদীপ্তা চক্রবর্তী।
প্রসঙ্গত, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার অপরাধে তিন আদিবাসী মহিলাকে দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা দন্ডি কাটাবার অভিযোগ উঠেছিল প্রাক্তন মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর পুত্রবধূ তথা তৃণমূলের মহিলা নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। যে ছবি ভাইরাল হতেই শুধুমাত্র রাজ্য রাজনীতি নয়, গোটা দেশ তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। আদিবাসী মহিলাদের সাথে কেন এমন নিকৃষ্টতম আচরণ করেছিলেন ওই মহিলা নেত্রী তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন আদিবাসীরাও। প্রদীপ্তা চক্রবর্তী কে গ্রেফতার করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাস্তায়ও নেমেছিল আদিবাসীরা। একাধিকবার ধর্মঘটের ডাকও দেয় আদিবাসী বিভিন্ন সংগঠন। যে সবের চাপে পড়েই দলীয় পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রদীপ্তা চক্রবর্তী কে। শুধু তাই নয়, ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে দলের মহিলা নেত্রী হিসেবে আদিবাসী মুখকেই সামনে এনেছিল তৃণমূল। এখানেই শেষ নয়, নব জোয়ার কর্মসূচি নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ দিনাজপুরে এসে বালুরঘাট পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকেও সরিয়ে দিয়েছিলেন প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে। একইসাথে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন, আপাতত দলের সমস্ত কর্মকাণ্ড থেকে তাকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। এরপর বেশ কিছুদিন দলের প্রোগ্রামে তাকে দেখা না গেলেও, ফের অতি সক্রিয়তার সাথে দলের কর্মকান্ডে নিযুক্ত হয়েছেন প্রাক্তন মহিলা নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে ফের প্রথম সারিতে ওই মহিলা নেত্রীকে দেখা যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের নেতৃত্বদের একাংশ। তবে কি ওই মহিলা নেত্রীর বিরুদ্ধে নেওয়া দলীয় সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে তৃণমূল ? এমন প্রশ্নও উস্কে উঠেছে খোদ দলের নেতা কর্মীদের মধ্যেই। যা নিয়ে এদিন প্রশ্ন করতেই কড়া বার্তা দিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃণাল সরকার। তার দাবি দলের তরফে প্রদীপ্তার বিরুদ্ধে কোন বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়নি। সমস্ত দলীয় অনুষ্ঠান থেকে তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে নির্দেশ খোদ তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় এসে দিয়ে গিয়েছেন বলেও এদিন জানিয়েছেন তৃণমূল সভাপতি। তবে তারপরেও দলীয় অনুশাসন ও নিয়ম-শৃঙ্খলা ভেঙ্গে কিভাবে বারবার দলের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন ওই প্রাক্তন মহিলা নেত্রী ? যে প্রশ্নও ক্রমশ জোড়ালো হয়ে উঠছে খোদ দলের নেতৃত্বদের একাংশের মধ্যে।