জলপাইগুড়ি:-
“নজির” গড়লেন নাজিরপাড়ার সিপিএম নেতৃত্ব। অসহায় প্রৌঢ়ার ঘরে পৌছে দিলেন আলো।
জলপাইগুড়ির খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নাজিরপাড়ার বাসিন্দা বছর ৬৩টির প্রানবালা রায়। স্বামীকে হারিয়েছেন বহুকাল আগে। দুই ছেলেও অকালে চলে গিয়েছেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে অন্যত্র। মৃত এক ছেলের ঘরের নাতি এবং নাতনিকে নিয়ে থাকেন টিনের একচলিতে ঘরে বসবাস করেন। মাটির মেঝে, টিনের বেড়া দেওয়া সেই ঘরে বৃস্টি হলেই জল পড়ে। এই বয়েসে বাসবাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে দুমুঠো অন্নের সংস্থান করেন। গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ থাকলেও, এতদিন অন্ধকারেই ছিলেন তিনি । টাকা দিয়ে বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ করার সামর্থ্য ছিলো না। কেরোসিনের কুপিই ছিলো একমাত্র ভরসা। তারমধ্যে কেরোসিনও এখন দূর্মুল্য। তাই বেশিরভাগ সময়টাই কাটত অন্ধকারে। নির্বাচনী প্রচারে এসে প্রৌঢ়ার এই অবস্থা চোখে পড়েছিলো সিপিএম নেতৃত্বের। তখনই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই অন্ধকার ঘোচানোর। তাই এই দীপাবলির প্রাক্কালে, যখন সব ঘরেই রোশনাই,সেই সময়টাই বেছে নিলেন তারা। উদ্যোগী হয়ে বিদ্যুৎদফতরে যোগাযোগ করে আলোর ব্যবস্থা করলেন। বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শুরু করে, লাইট কেনা এসবের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন হয়েছে, তা নিজেরাই দিয়েছেন স্থানীয় সিপিএম কর্মীরা। দীপাবলীর মরশুম বলে টুনির আলোর ব্যবস্থাও হয়েছে। সেই আলোয় উদ্ভাসিত প্রৌঢ়ার মুখ।
তবে আরও সমস্যা রয়েছে। কোনো ভাতার ব্যবস্থা এখনো হয়নি তার। ছেলের নামে আবাস যোজনার ঘর পেয়েছিলেন। দুই কিস্তির টাকা দিয়ে সেই ঘরের অনেকটা তৈরীও হয়েছিলো। কিন্তু ছেলের মৃত্যুর পর বাকি কিস্তির টাকা মেলেনি,ফলে ওই ঘর অর্ধেক তৈরী হয়ে পড়ে রয়েছে।
সিপিএম এর স্থানীয় নেতৃত্ব এবং পঞ্চায়েত সদস্যা জানিয়েছেন, এই সমস্যাগুলি মেটানোর জন্য উদ্যোগ নেবেন।
প্রশ্ন উঠছে, বিরোধীরা এইভাবে মানুষের পাশে দাড়াতে পারলে,ক্ষমতায় থাকা শাসকদল কেন সেই কাজটা করতে পারেননি? আগে যিনি ওই এলাকায় জনপ্রতিনিধি ছিলেন তিনি কেন উদ্যোগ নেননি?
যদিও এই বিষয়ে তৃনমূল পরিচালিত খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মনোজ ঘোষ জানিয়েছেন, তাদের কাছে প্রৌঢ়া অসহায় অবস্থার কথা জানাননি। দলের যিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছিলো তিনিও জানাননি। তবে এবার প্রৌঢ়ার অন্যান্য সমস্যাগুলি মেটানোর উদ্যোগ তিনি নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন উপপ্রধান মনোজবাবু।
অন্যদিকে সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, তারা চান এই উদ্যোগ একটা উদাহরণ তৈরী করুক, যাতে দলমত নির্বিশেষ সকলে এগিয়ে আসে অসহায় মানুষদের পাশে দাড়াতে। তাহলেই হয়ত এই অসহয়তার অন্ধকার ধীরে ধীরে কেটে যাবে।