তপনের নির্শানী এলাকায় রাস পূর্ণিমার সন্ধ্যায় সড়ক কালী মাতার মাতার পুজোতে প্রচুর ভক্তদের ভিড়, মিলিত হয় উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন,পুজোকে কেন্দ্র করে বসে বিরাট মেলাও
গঙ্গারামপুর ২৬ শে নভেম্বর দক্ষিণ দিনাজপুর।রাস পুর্নিমার সন্ধ্যায় নির্শানী সড়ক কালীপুজোয় মেতে উঠল হাজার হাজার ভক্তরা।যে পুজোকে কেন্দ্র করেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন থানার নির্শানী এলাকার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন ব্লকের পাশাপাশি বাইরে থেকেও ভক্তরা এসে ভিড় করেন সেখানে।মায়ের এই পুজোকে কেন্দ্র করে রয়েছে বিভিন্ন ইতিহাসে।তান্ত্রিক মতে মায়ের পুজো হয়,পাঠা বলি দেবার নিয়মও রয়েছে।পুজোকে কেন্দ্র করেই জমে ওঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরাট মেলাও।সব মিলিয়ে ভক্তদের ভিড়ে হয় ব্যাপক।
আজ থেকে ৪০/৪৬ বছর আগের কথা। এক সময় জেলার তপন ভায়া গঙ্গারামপুর রুটের নির্শানী এলাকা ছিল প্রায় জনশূন্য। চারিদিকে বন জঙ্গলে ঘেরা, লোক বসতি ছিল না বললেই চলে। দিনের বেলায় শেয়ালের দল ঘুরে বেড়াত সেখানে।সন্ধ্যের পর চোর,ডাকাতদের আস্থানায় পরিনত হত সেই এলাকা।তাই কেউ সাহস করে সেই পথ দিয়ে যাতাযাত করতে পারতেন না বলে জানা গেছে।তাঁর ওপর প্রায় প্রতিদিনই নির্শানী এলাকায় বহু দুর্ঘটনা ঘটেই চলত।এসবের মাঝেই এলাকার বাসিন্দা প্রবোধ মন্ডল নির্শানীতে সড়ক কালীপুজো করার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন।তিনি স্বপ্নে মায়ের আদেশ পাবার পর প্রবোধ বাবু বিষয়টি নিয়ে এলাকার বাসিন্দা প্রানেশ চক্রবর্তী,গৌর সেন,দ্বিগেন মন্ডল,শ্যামল সেনদের সঙ্গে আলোচনা করে রাস পূর্নিমার পুন্য তিথিতে নির্শানীতে সড়ক কালী পুজো শুরু করেন সেটা প্রায় ৪৫/৪৬ বছর আগে। সেই থেকে প্রতিবছর রাস পুর্নিমার সন্ধ্যায় মায়ের পুজো হয়ে থাকে। এবছর এদিন নিয়ম করে পুজো হয়। নির্শানী মন্দিরের পুরোহিত বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য কাছ থেকে জানা গেছে, তার বাবার মৃত্যুর পরে তিনি এখানে তিনি বহুদিন ধরেই মায়ের পুজো করে আসছেন।মায়ের কাছে যে মানুষ করে তার মনেরবাসায় পূর্ণ হয়। তান্ত্রিক মতে পুজো হয়ে থাকে।প্রচুর ভক্তরা সেখানে আসেন। তাছাড়া সারা বছরই মায়ের স্থানে পুজো দেওয়া হয়ে থাকে। নির্শানী সড়ক কালী মন্দিরের পুরোহিত বৈদ্যনাথ মুখার্জি বলেন,এক সময় নির্শানী এলাকা বনজঙ্গলে ঘেরা ছিল।এলাকায় কোনো বাড়ি ঘর না থাকায় দিনের বেলায় শেয়াল ঘুরে বেড়াত। প্রতিদিন নির্শানী এলাকায় পথ দুর্ঘটনা ঘটত।একদিন প্রবোধ মন্ডল মায়ের পুজো করার স্বপ্নাদেশ পান।সেই মত রাসপূর্নিমার মায়ের পুজো হয়। তিনি বলেন পুজোর শুরু থেকে আমার বাপ ঠাকুরদা নির্শানী সড়ক মায়ের পুজো করতেন। বর্তমানে আমি এই পুজো করছি। আমাদের এই পুজোয় ভেদাভেদ ভুলে সকলেই মেতে ওঠেন। প্রতিবছর ধুমধাম সহকারে রাসপূর্নিমায় পুজো হয়।
এবছর রবিবার নির্শানী কালীপুজো ঘিরে সকাল থেকেই তপনব্লকের,শ্যামনগর,বুধইচ,অন্তসিমূল,ঢেলপির,হজরতপুর, নয়াবাজার,সহ জেলা বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি দুরদুরান্তের ভক্তদের ভিড় জমেছে। বসেছে বিরাট আকারের মেলাও। গঙ্গারামপুর রুটের রাজ্য সড়কের পাশে মায়ের পুজোর পর এলাকায় ধীরে ধীরে জন বসতি গড়ে উঠেছে।কমেছে দুর্ঘটনা।
পুজোর সভাপতি তথা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রাম প্রসাদ দাস ও পুজো কমিটির সম্পাদক অনুপ মন্ডল বলেন, সারাবছর মন্দিরে পুজো হয়ে থাকে।রাসপূর্নিমার সন্ধ্যায় বার্ষিক পুজো হয়।রীতি অনুয়ায়ী আজকে মায়ের পুজো হচ্ছে। তাই সকাল থেকে ভক্তদের ভিড় জমেছে।
এলাকার বাসিন্দা তথা মুসলিম ভক্ত গোলাম রসিদ সরকার ও এক হিন্দু গৃহবধূ ভক্তরা জনিয়েছেন,প্রতিবছর আমরা এই দিনটিতে নির্শানী কালীপুজোয় মেতে উঠি।এবছর পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। বাইরে থেকে চাঁদা তুলতে হয় না। ভক্তদের দানে মায়ের পুজো হয়। সকাল থেকেই নির্শানী কালীমাতার পুজোকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার ভক্তদের ভিড় জমছে সেখানে। সব মিলিয়ে মায়ের এই পুজোর দিনে প্রচুর ভক্তদের ভিড় সেখানে লক্ষ্য করা গেছে।