ডাকঘরে সঞ্চিত আমানতকারীদের অর্থ তছরুপের মামলায় বালুরঘাটে আর এসপি নেতার বাড়িতে অভিযান ইডির। ১৫ ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ আধিকারিকদের।
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১১ ডিসেম্বর ——– আমানতকারীদের অর্থ তছরুপের মামলায় এবারে আর এস পি নেতার বাড়িতে ম্যারাথন অভিযান ইডির আধিকারিকদের। বালুরঘাটের চকভবানী এলাকার ঘটনা নিয়ে শুরু রাজনৈতিক তরজা। প্রায় ১৫ ঘন্টা ধরে ইডির আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন বালুরঘাট পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানের ছেলে। যার বিরুদ্ধে ডাকঘরে সঞ্চিত আমানতকারীদের কয়েক কোটি টাকা তছরূপের অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে শনিবার ভোররাত পর্যন্ত ইডির আধিকারিকদের অভিযানের পরেই এনিয়ে শহরজুড়ে আন্দোলনে নামবার হুশিয়ারি দিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। ঘটনার কথা স্বীকার করলেও ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে চাননি বালুরঘাট পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা প্রয়াত আর এসপি নেতা দিলীপ ধরের পরিবারের লোকেরা।
প্রশাসন সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রায় কয়েকবছর আগে বালুরঘাট হেড পোস্ট অফিস থেকে জনগনের সঞ্চিত কয়েক কোটি টাকা তছরূপের অভিযোগ ওঠে। যে ঘটনার তদন্তে নেমেই ইডির আধিকারিকরা বরানগরের বাসিন্দা প্রজ্ঞা পারমিতা মৈত্র ও দিব্যেন্দু ধরের নাম পায়। যাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেই এই ঘটনার কুলকিনারা করতে চায় ইডির আধিকারিকরা। যে হিসাবেই শুক্রবার ইডির একটি বিশেষ টিম হানা দেয় বালুরঘাটের চকভবানী এলাকার বাসিন্দা তথা প্রয়াত আর এসপি নেতা দিলীপ ধরের বাড়িতে। শনিবার ভোররাত পর্যন্ত যার জিজ্ঞাসাবাদ চলে বলেও স্থানীয় সূত্রের খবর। যে ঘটনা সামনে আসতেই রীতিমতো হইচই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গোটা বালুরঘাট শহরজুড়ে। ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন প্রয়াত ওই আর এসপি নেতার বাড়ির লোকেরা। তবে এই ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেননি এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা আর এসপি নেতা প্রলয় ঘোষ। একইভাবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন প্রতিবেশীরাও। সংস্কৃতির শহর বালুরঘাটকে কালিমালিপ্ত করেছে এই ঘটনা, এননটা উল্লেখ করে এনিয়ে আন্দোলনে নামবার হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রতিবেশী তথা তৃণমূল নেতা বিপুল কান্তি ঘোষ। এদিকে এই ঘটনাকে হিমশৈলের চূড়া আখ্যা দিয়ে ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থল এই দক্ষিন দিনাজপুর। ইডির আধিকারিকরা একটু ভালো করে খুজলেই আরো অনেককেই পেয়ে যাবেন।
প্রতিবেশী এক মহিলা বলেন, তিনটি গাড়িতে চেপে ইডির আধিকারিকরা ওই বাড়িতে এসেছিল। ভোর রাত অবধি জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা চলে গিয়েছে। তবে বাড়ির ভিতরে ঢুকে তারা কি করেছেন তা তাদের জানা নেই।
প্রতিবেশী তথা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বিপুল কান্তি ঘোষ বলেন, সংস্কৃতির শহরে এঘটনা যথেষ্টই অবাক করেছে তাদের। পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা আর এসপি নেতার বাড়িতে ইডির এমন অভিযান এই শহরকে কলঙ্কিত করেছে। তারা চান এই দুর্নীতির পিছনে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হোক। ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে রাস্তাতেও নামবেন তারা।
বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরুপ চৌধুরী বলেন, বাম তৃণমূল যৌথ ভাবেই এসব দুর্নীতি করছে। রাজ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিবাজরা এই জেলাতেই রয়েছে। ইডির আধিকারিকদের উচিত এর পিছনে আরো যারা যুক্ত রয়েছে তাদের প্রত্যেককে খুঁজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক।
আর এসপি নেতা প্রলয় ঘোষ বলেন, ইডির আধিকারিকদের অভিযান সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। খোঁজ নেবার পরেই এব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারবেন।
ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে না চাইলেও প্রয়াত দিলীপ ধরের পৌত্র জানিয়েছেন, ইডির আধিকারিকরা দু একটি প্রশ্ন করেই চলে গেছেন। তবে কি প্রশ্ন করেছেন তা বলতে পারবেন না। একইসাথে বাবা দিব্যেন্দু ধর অসুস্থ থাকবার কারনে কিছু বলতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন।
বালুরঘাট পোস্ট অফিসের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বলেন, তদন্তের স্বার্থে এব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়।