দেড়শো কিমি সাইকেল চালিয়ে বালুরঘাটে রোজ খবরের কাগজ বিক্রি করা বয়স পয়ষট্টির মাধব চক্রবর্তীই আজ কবি সুকান্তর “রানার”। অবাক পড়শি থেকে অতি অল্প বয়সী সহকর্মীরাও।
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৩০ ডিসেম্বর ——- পেশা নয়, খবর পড়াবার নেশা নিয়েই রোজ ১৫০ কিমি সাইকেল চালিয়ে বালুরঘাটের ‘রানার’ পয়ষট্টির মাধব চক্রবর্তী। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লিখা “রানার” কবিতার লাইনগুলি প্রায় সকলেরই জানা রয়েছে। যেখানে কবি লিখেছিলেন ” রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘন্টা বাজছে রাতে” রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার৷ সুকান্ত ভট্টাচার্যের লিখা সেই কবিতার রানার’রা যে আজো হারিয়ে যায়নি বালুরঘাটের মাধব চক্রবর্তী কে দেখলে যেন উস্কে ওঠে কবির লিখা সেই কবিতার লাইনগুলি। বালুরঘাট শহর লাগোয়া চকভৃগুর ডাকরা এলাকার বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির মাধব চক্রবর্তী যেন কবির লিখা কবিতার হুবহু তেমনই একজন রানার৷ তবে এক্ষেত্রে চিঠির বোঝা নয়, খবরের কাগজের বোঝা বয়ে নিয়ে চলেছেন দীর্ঘ পয়তাল্লিশ বছর ধরে৷ প্রায় দেড়শো কিলোমিটার চলাচলের সঙ্গী সাইকেলটিই যেন তার আস্ত একটি বাড়ি৷ কি নেই সেখানে, হরেকরকম খবরের কাগজ থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়ার জিনিস, ছাতা, গামছা সবই রয়েছে সেই সাইকেলটিতে। কবি সুকান্তর লিখা রানারের পায়ের ঝুম ঝুম শব্দটিও যেন এখানে কিছুটা রূপ বদলে দিয়েছে সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শব্দে৷
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সময়কালীন সময়ে ওপার বাংলা থেকে এপারে চলে এসে আশ্রয় নেন বালুরঘাটের ভুষলাতে৷ পরে মাধব বাবুর ঠিকানা বদলে যায় বালুরঘাটের ডাকরায়৷ ওপারেও পেপার বিক্রি করতেন তিনি৷ তবে তা পেশা নয়, ছিল নেশা৷ এপারেও যেন সেই নেশায় ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠে বালুরঘাট থেকে বোল্লা অবধি বিভিন্ন গ্রামে সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে রোজ বিলি করেন প্রায় ২০০ পেপার৷ সময়ের ফাঁকে নিজেও একসময় সবগুলো পেপারেই চোখ বুলিয়ে নেন৷ রাত্রি ৮টায় অবসন্ন শরীরে ঘরে ফেরেন তিনি। এরপরেও বিশ্রাম নেই, চলে দীর্ঘ রাত অবধি নানা দেবদেবীর আরাধনা। এভাবেই রোজ প্রায় ১৫০ কিমি সাইকেল চালিয়ে মাধববাবু শুধু খবরের কাগজ নয়, বিক্রি করেন খবর। সঙ্গ দেবার জন্য বাহবা দেন তার একমাত্র সঙ্গী সাইকেলকে৷ জীবন সঙ্গী গত হয়েছেন ১৭ বছর আগে৷ তবে ভেঙে পরেন নি তিনি, পেপার বিলির দায় যে উনি মাথা পেতে নিয়েছেন৷ রোজ পেপার না পড়লে কি আর পাঠকের জানার পরিধি বাড়ে! এমন ভাবনা থেকেই বয়সকে উপেক্ষা করে দুর্বার গতিতে রোজ ছুটে বেড়ান তিনি। যাকে দেখে শুধুমাত্র পড়শিরাই নয়, অবাক হন অতি অল্প বয়সী সহকর্মীরাও। তাদের চোখেই মাধববাবু যেন কবি সুকান্তর সেই “রানার”।
যদিও মাধব চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এটা তার জীবনের একমাত্র নেশা। শুধুমাত্র মানুষকে খবর পড়াবার ভাবনা থেকেই সকাল থেকে রাত অবধি ছুটে বেড়ান গ্রাম গ্রামাঞ্চলে।
সহকর্মী মাধব মৈত্র বলেন, ৬৫ বছরের একজন সহকর্মীর এমন উদ্দীপনা তাদেরকেও উজ্জীবিত করে। তবে তারাও কিছুটা ভেবে অবাক হন কিভাবে রোজ প্রায় ১৫০ কিমি সাইকেল চালিয়ে একাজ করেন তিনি।