গঙ্গারামপুরের ধলদিঘিতে দুই সম্প্রদায়ের মিলনে জমজমাট ঐতিহাসিক উরুষ মেলা

0
397
গঙ্গারামপুরের ধলদিঘিতে দুই সম্প্রদায়ের মিলনে জমজমাট ঐতিহাসিক উরুষ মেলা
অনুষ্ঠানে মিলিত হল হিন্দু মসুলামান উভয় সম্প্রদায়ের ভক্তরা, মেলা চলবে বেশ কয়েকদিন ধরে

গঙ্গারামপুর, ১ফেব্রুয়ারি, দক্ষিণ দিনাজপুর ।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর শহরের থেকে ২ কিমি দুরে ধলদিঘির দক্ষিণ পাড়ে সৈয়দ করিম আলিসা ফকিরের মাজারে প্রতিবছরেরর মতো এবারও বসেছে ঐতিহাসিক উরুষ মেলা। সমস্ত ভক্তদের তরফে দেওয়া হল সিন্নিও।এবার উৎসবের উৎসাহ বাড়ালেন প্রতি বছরের মত উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা সেখানে ভিড় জমান সকাল থেকে।এবছর মেলাতে হাজির হয়ে এমন অনুষ্টানের উদ্যাগতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বহু বিশিষ্টজনেরা।
জানা গেছে,১৮১২সালে মেলার সুত্রপাত হয়। করিম আলিসা ফকিরের ষষ্ট পুরুষ সৈয়দ আমজাদ আলিসা ফকিকের পরিবার সূত্রে জানা গেছে,সৈয়দ করিম আলিসা ফকির তার গুরুদেবের নিদের্শে ধলদিঘির দক্ষিণপাড়ে আসেন। তিনি একটি গরে ধ্যানমগ্ন থাকতেন সারাবছর। ২৫ মাঘ শুক্লাতিথির কাকভোরে ধলদিঘিতে শ্চান করে চটবস্ত্র পরে বাহিরে এসে অগণিত হিন্দু ও মুসলিম ভক্তদের নিয়ে ধর্মীও আলোচনা করতেন। তখন থেকেই এই মেলার সুচনা হয় ।ওই সময় অবিভক্ত দুই বাংলার ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যসামগ্রী নিয়ে মেলার আসতেন। বিহারের পূনিয়া, কিষানগঞ্জ থেকে হাতি, ঘোড়া, উট নিয়ে আসতেন ব্যবসায়ীরা। সেই সময় বসত পশু মেলাও। বিনোদনের জন্য কোলকাতার যাত্রা, পুতুলনাচ ,যাদু সার্কাস, ইত্যাদিও আসত।দুই বাংলা ভাগ হওয়ার পরেও ১৯৮০ সালেও জাকজমাট মেলা অনুষ্টিত হয়েছিল সেখানে। তখন মেলা পরিচালনা করতেন সৈয়দ মেছারত আলি এবং তার মৃত্যুর পর সৈয়দ ওয়াবের আলিসা ফকির মেলাটি পরিচালনা করতেন। কিন্তু উভয়ে মারা যাবার পর সেই ধরনের জাকজমাট মেলা বন্ধ হয়ে যায়।এর পরে ১৯৯৫ সাল থেকে সৈয়দ করিম আলিসা ফকিরের ষষ্ট পুরুষ সেই মেলার দায়িত্ব পালন করে আসছে। আগের মত এখন বিশাল মেলা না হলেও বর্তমানে মালদা ও দুই জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সামগ্রী নিয়ে মেলায় আসেন। এবারও গতকাল থেকে থেকেই বসতে শুরু করেছে দোকান। এসেছে সার্কাস, ম্যাজিক, ইত্যাদি। হিন্দু, মুসলিম উভয় সম্পওদায়ের মানুষ ধলদিঘিতে শ্চান সেরে পীরের মাজারের সিন্নি দিয়ে মেলাতেই রান্না-খাওয়া করছেন এবং মেলা উপভোগ করেন।
এক হিন্দু ভক্ত জানান, মনের মানত পুরন হয় তাই এই দিনটিতে এখানে ছুটে আসি, আর বাবাকে স্বরণ করি।
অপর এক মুসলিম ভক্ত জানান, বাবার কৃপায় আমার মনের বাসনা পুরন হয়েছে তাই প্রতি বছর এখানে আসি আর বাবার মাঝারে সিন্নি চড়ায়। সুত্রে যানা গিয়েছে, জীন্দাপীর সৈয়দ করিম আলি টাট শাহী ফকিরের স্ত্রী পদ্মমণি ঠাকুরের সমাধিস্থল রয়েছে তার সমাধির পাশেই। এই দিনটিতে সেখানে চলে নাম সংকীর্ত্তন।
এবছর এই অনুষ্টানে হাজির হয়েছিলেন সমাজের বহু বিশিষটজনেরা।পরে তারা এই মেলার পুরনো স্মৃতিচারনা করে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন কমিটির সদস্যদের।
সৈয়দ করম আলী টাটসাহি ফকিরের অষ্টম বংশধর এদিন জানিয়েছেন, এই উৎসবের বহু ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে।সেই টানেই হিন্দু মুসুলমান সমস্ত ভক্ত এখানে ছুটে আসেন এই দিনটিতে। আগের মত বহু দিন ধরে মেলা না হলেও ভক্তি নিষ্টা রয়েছে প্রচুর।
এক কথায় দুই সম্প্রদায়ের মিলন ক্ষেত্রের প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও ধলদিঘির উরুষ মেলা মঙগলবার যেন এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মসুলমান, হিন্দু তাহার নয়ন মনি মুসলিম তার প্রাণ। তবে আগের মত এখন আর বহু দিন ধরে মেলা না হলেও কয়েক দিনের মেলায় ভক্তি নিষ্টার পাশপাশি বিনোদনের খামতি থাকে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here