৩৭ বছর সংশোধনাগারে কাটিয়ে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করছেন আশি বছর বয়সী গুরুপদ

0
148

৩৭ বছর সংশোধনাগারে কাটিয়ে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করছেন আশি বছর বয়সী গুরুপদ। বালুরঘাটের রায়নগরে নৃশংস খুনের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন তিনি

পিন্টু কুন্ডু , বালুরঘাট, ১৫ মে…….. কথায় আছে “রাখে হরি মারে কে” বাংলায় প্রচলিত এই প্রবাদটি যেন অবিভক্ত পশ্চিম দিনাজপুরের সেই রক্তাক্ত রায়নগরের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত গুরুপদ বর্মনের জন্যই আজ প্রযোজ্য। আশির দশকে বালুরঘাটে ঘটে যাওয়া সেই নৃশংস ঘটনার মুল অভিযুক্তরা প্রায় সকলেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলেছেন। কিন্তু একই সাজা ঘোষণা হবার পরেও রদ হয়েছিল শুধুমাত্র গুরুপদ বর্মনেরই। জীবনের অর্ধেক সময় সংশোধনাগারের ভেতরে কাটিয়ে ৩৭ বছর পর মুক্তি পেয়ে নতুন ভাবে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস যেন শুরু করছেন বয়স আশির গুরুপদ। যদিও কিভাবে সেই খুনের কেসে জড়িয়ে পড়েছিলেন তা যেন এখনও অজানা বলে দাবি অভিযুক্ত সেই ব্যক্তির। তবে এই বৃদ্ধ বয়সে সামাজিক জীবনে ফিরে কি করবেন তিনি, তা নিয়েই আজ যেন কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন গুরুপদ। এদিকে বৃদ্ধ গুরুপদকে সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে হাঁস, ছাগল পালন করবার পাশাপাশি একাধিক সরকারী প্রকল্পকে কার্যকরী করতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন।

ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় ৩৭ বছর আগে। সালটা আনুমানিক ১৯৮৭। অবিভক্ত পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের রায়নগর গ্রামে জমি বিবাদের জেরে একই পরিবারের প্রায় আট জন সদস্যকে মর্মান্তিক ভাবে খুন হতে হয়। স্থানীয়দের অনেকের মতে, তখন মোটরগাড়ি সহজলভ্য না থাকায় শহর লাগোয়া ওই গ্রাম থেকে গরুর গাড়িতে করে মৃত পরিবারের সদস্যদের বালুরঘাটে আনা হয়েছিল। খুনের অভিযোগে চার জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ। প্রায় নয় বছর আদালতে মামলাও চলেছিল। অবশেষে ১৯৯৬ সালে চারজন অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল বালুরঘাট জেলা আদালত। যার মধ্যে দুজনের ফাঁসিও হয়েছে। একজন সংশোধনাগারেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। আর সেই চারজনের মধ্যেই একজন ছিলেন গুরুপদ বর্মন। সংশোধনাগারে কৃষিকাজ, ফুলের বাগান পরিচর্যা সহ ভাল কাজের জন্য তার ফাঁসি রদ হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন তিনি। তবে ১৪ বছর সাজা পার হওয়ার পরেও তিনি পুরোপুরি মুক্তি পাননি। মাঝে মধ্যেই প্যারোলে বেরিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেন। করোনা সময়ে দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকেছেন তিনি। পরে আবার সেই সংশোধনাগারে বন্দি। সংশোধনাগারে সবজি ও ধান চাষ করে উপার্জিত অর্থ বাড়িতে পাঠিয়ে সংসার চলত তার। এদিকে খুনের ঘটনার পরে রায়নগর গ্রামে উত্তেজিত জনতা তাদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছিল। অসহায় তার স্ত্রী তিন মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে শালগ্রাম এলাকায় চলে যায়। এখন সেখানেই তাদের বাস। অবশেষে রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের রিপোর্টের নিরিখে রিভিউ বোর্ড তাকে সম্পূর্ণ মুক্তি দিয়েছে।

গুরুপদ বর্মন বলেন, ‘সন্তানদের একাই মানুষ করেছে আমার স্ত্রী। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে বাইরে কাজ করে। মুক্তি পেয়ে আমাদের বার্ধক্য ভাতা হয়েছে। এখন কাজ করার সামর্থ্য নেই। তবে হাঁস, ছাগল ইত্যাদি দিলে কর্মসংস্থান নিয়ে নতুন জীবন শুরু করব।’

তার স্ত্রী শচীরাণী বর্মন জানান, ‘স্বামীর সাজা ঘোষণার সময় এক – দুই বছরের সন্তান বাড়িতে ছিল। জীবনের ২৮ টি বছর কিভাবে কাটিয়েছি আমরা জানি।’

জেলা প্রশাসনের প্রবেশন কাম আফটার কেয়ার আধিকারিক জয়ন্ত কুমার সুর জানান, ‘অভিযোগকারীদের আপত্তি আছে কিনা, সামাজিক জীবনে ফিরতে কতটা সক্ষম, পরিবার মেনে নেবে কিনা দেখে রিপোর্ট তৈরি হয়। অবশেষে সবদিক বিবেচনা করে তাকে মুক্তি দিয়েছে বোর্ড। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে তাদের গবাদি পশু দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here