পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘিরে অশান্তি! তপন কলেজে ছাত্র বিক্ষোভে উত্তেজনা, গেটে তালা ঝুলিয়ে অচলাবস্থা তৈরি ছাত্রছাত্রীদের
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ২৭ জানুয়ারী —— দক্ষিণ দিনাজপুরে তপনের নাথানিয়েল মুরমু কলেজে সোমবার দুপুর থেকে ছাত্র বিক্ষোভে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নির্ধারিত পরীক্ষা বাতিল করে ৩০ জানুয়ারি বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্তে ফুঁসে উঠেছে ছাত্রসমাজ। প্রতিবাদে কলেজের গেটে তালা ঝুলিয়ে, স্লোগান তুলে অবস্থান বিক্ষোভ ছাত্রছাত্রীদের। প্রিন্সিপাল এবং পরিচালন সমিতির সভাপতির একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই গোটা ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে।
বিক্ষোভকারী ছাত্রনেতাদের দাবি, তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই পরীক্ষার দিন বদলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। “পরীক্ষা বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান মানা হবে না। পরীক্ষা এবং অনুষ্ঠান দু’টিই হোক, তবে আলাদা দিনে।”—কঠোর ভাষায় বললেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা অশোক প্রামাণিক।
তৃণমূল ছাত্র নেতা রাশেদ খান আরও বলেন, “প্রিন্সিপাল এবং পরিচালন সমিতির সভাপতি ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই, কিন্তু আমাদের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন আরও জোরদার হবে।”
জানা গেছে ঘটনার আরও গভীরে রয়েছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। দীর্ঘদিন ধরে কলেজের ক্ষমতা ছিল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদার হাতে। দলবদলের পর সেখানে গৌতম দাস ও প্রশান্ত মিত্রের নেতৃত্বাধীন দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়। অভিযোগ, ৩০ জানুয়ারির অনুষ্ঠান ঘিরে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
অধ্যক্ষ প্রণয় নাইজেরিয়া এবং পরিচালন সমিতির সভাপতি অমল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, প্রশাসনের এই নীরবতা অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীদের মতে, পরীক্ষা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরীক্ষা বাতিল করে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত কখনও মেনে নেওয়া যায় না। ‘‘অনুষ্ঠান হোক, তবে পরীক্ষা বাদ দিয়ে নয়,’’ জানালেন ছাত্রছাত্রীরা।
স্থানীয় মহলের মতে, প্রশাসন যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। ছাত্রদের দাবি মেনে মধ্যস্থ সমাধান খুঁজে বের করাই একমাত্র উপায়। না হলে তপন কলেজের অস্থিরতা বড়সড় আন্দোলনের রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার স্বার্থ রক্ষা করা দুই পক্ষেরই দায়িত্ব। কিন্তু এই মুহূর্তে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ উপেক্ষা করায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। যে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে।