গঙ্গারামপুরে ধলদীঘিতে দুই সম্প্রদায়ের মিলনে জমজমাট ঐতিহাসিক উরুষ মেলা অনুষ্ঠিত হল

0
59

গঙ্গারামপুরে ধলদীঘিতে দুই সম্প্রদায়ের মিলনে জমজমাট ঐতিহাসিক উরুষ মেলা অনুষ্ঠিত হল
শীতল চক্রবর্তী ৯ ফেরুয়ারি: শহর থেকে দুই কিমি দূরে ধলদীঘির দক্ষিণ পারে
পাড়ে সৈয়দ করিম আলিসা ফকিরের মাজারে প্রতিবছরেরর মতো এবারও বসেছে ঐতিহাসিক উরুষ মেলা। শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের ভক্তরাই নন, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রচুর ভক্তরা এমন অনুষ্ঠানে এসে মঙ্গল কামনা প্রার্থনা করে থাকেন। সমস্ত ভক্তদের তরফে দেওয়া হল সিন্নি। অনুষ্ঠানকে ঘিরে বসেছে বিরাট আকারে মেলায়, যা বেশ কিছুদিন ধরে চলবে বলে জানা গিয়েছে। উৎসবের উৎসাহ বাড়াতে বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে।
সৈয়দ করম আলি টাটসাহি ফকিরের পঞ্চম বংশধর সৈয়দ আমজাদ আলিসা ফকির এদিন জানিয়েছেন, এই উৎসবের বহু ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে।সেই টানেই হিন্দু-মুসুলমান সমস্ত ভক্তরা এখানে ছুটে আসেন। আগের মত এতদিন ধরে মেলা না হলেও ভক্তি নিষ্ঠা রয়েছে প্রচুর।
সৈয়দ করিম আলিসা ফকির তার গুরুদেবের নিদের্শে ধলদীঘির দক্ষিণপাড়ে এসেছিলেন। তিনি একটি গড়ে ধ্যানমগ্ন থাকতেন সারাবছর।২৫ মাঘ শুক্লাতিথির কাকভোরে ধলদীঘিতে স্নান করে চটবস্ত্র পরে বাহিরে এসে অগণিত হিন্দু-মুসলিম ভক্তদের নিয়ে ধর্মীও আলোচনা করতেন। তখন থেকেই এই মেলার সূচনা হয়।
সৈয়দ করিম আলিসা ফকিরদের বংশধরদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে যে, ১৮১২ সালে এই মেলাটির সূত্রপাত হয়। সৈয়দ করিম আলিসা ফকিরের ষষ্ঠ পুরুষ সৈয়দ আমজাদ আলিসা ফকিরের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে যে, প্রায় ২০০বছরের বেশি সময় ধরে এমন মেলা হয়ে আসছে। জিন্দাপীর সৈয়দ করিম আলিটাট শাহী ফকিরের স্ত্রী পদ্মমণি ঠাকুরের সমাধিস্থল রয়েছে তার সমাধির পাশেই। এই দিনটিতে সেখানে চলে নাম সংকীর্ত্তনও।ওই সময় অবিভক্ত দুই বাংলার
ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যসামগ্রী নিয়ে মেলার আসতেন।বিহারের পূর্ণিয়া, কিষানগঞ্জ থেকে হাতি, ঘোড়া, উট নিয়ে আসতেন ব্যবসায়ীরা। সেই সময় বসত পশু মেলাও। বিনোদনের জন্য কলকাতার যাত্রা, পুতুলনাচ, যাদু, সার্কাস, ইত্যাদিও আসত। দুই বাংলা ভাগ হওয়ার পরেও ১৯৮০ সালেও জাঁকজমাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেখানে। তখন মেলা পরিচালনা করতেন সৈয়দ মেছারত আলি এবং তার মৃত্যুর পর সৈয়দ ওয়াবের আলিসা ফকির।কিন্তু উভয়ে মারা যাবার পর সেই ধরনের আঁকজমাট মেলা বন্ধ হয়ে যায়।
এর পরে ১৯৯৫ সাল থেকে সৈয়দ করিম আলিসা ফকিরের ষষ্ঠ পুরুষ সেই মেলার দায়িত্ব পালন করে আসছে। আগের মত এখন বিশাল মেলা না হলেও বর্তমানে মালদা ও দুই জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সামগ্রী নিয়ে মেলায় আসেন। এবারও শনিবার থেকেই বসতে শুরু করেছে দোকান মাঠ গুলি। এসেছে সার্কাস, ম্যাজিক সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিষপত্র। হিন্দু, মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন শনিবার সকালে ধলদীঘিতে স্নান সেরে পীরের মাজারের সিন্নি দিয়ে মেলাতেই রান্না-খাওয়া করছেন এবং মেলা উপভোগ করছেন। এক মুসলিম ভক্ত ইছাক মহম্মদ জানান, “বাবার কৃপায় আমার মনের বাসনা পুরন হয়েছে, তাই প্রতি বছর এখানে আসি আর বাবার মাঝারে সিন্নি চড়ায়”।
মেলাতে আসা এক হিন্দু ভক্ত গণদীপা চক্রবর্তী জানান, মনের মানত পুরন হয় তাই এই দিনটির দিনে এবছর এখানে এসেছি”।
তবে আগের মত এখন আর বহু দিন ধরে মেলা না হলেও কয়েক দিনের মেলায় ভক্তি-নিষ্ঠার পাশপাশি বিনোদনের খামতি থাকে না সেখানে। এক কথায় দুই সম্প্রদায়ের মিলন ক্ষেত্র ধলদীঘির উরুষ রবিবার যেন এক বৃদ্ধে দুটি কুসুম হিন্দু-মসুলমান, হিন্দু তাহার নয়ন মনি, মুসলিম তার প্রাণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here