খরার মরশুমেই হুড়মুড়িয়ে ভাঙল আত্রেয়ীর বাঁধ! আতঙ্ক বালুরঘাটের চকভৃগুতে
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১০ ফেব্রুয়ারী ——- বর্ষার জলস্রোত নয়, খরার মরশুমেই আচমকা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল আত্রেয়ী নদীর বাঁধ! রবিবার রাতে এই ঘটনা ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বালুরঘাট শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের চকভৃগু এলাকায়। বিকট শব্দে বাঁধের একাংশ ভেঙে নদীর জল হু হু করে বইতে শুরু করায় রাতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণের কারণেই বর্ষা ছাড়াই ভেঙে পড়ল বাঁধ। ওইদিন রাতেই যে ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় ছুটে যান বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র, স্থানীয় কাউন্সিলর ও বালুরঘাট থানার আইসি। যদিও চেয়ারম্যান জানান, আতঙ্কের কিছু নেই, দ্রুত বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে।
তবে সোমবার সকাল হতেই আতঙ্ক আরও বাড়ে। আত্রেয়ীর স্রোতে বাঁধের আরও কিছু অংশ ধসে পড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদে সরব হন স্থানীয়রা। বিষয়টি নজরে আসতেই নড়েচড়ে বসে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণা, পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তাল সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। জরুরি ভিত্তিতে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, আত্রেয়ী রিভার ড্যামের কোনও ক্ষতি হয়নি, তবে পাশে থাকা বাঁধের কিছু অংশ ভেঙেছে। কী কারণে এই বিপর্যয়, তা খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার সেচ দপ্তরের এক বিশেষজ্ঞ দল আসছে। যাদের রিপোর্টেই স্পষ্ট হবে ঘটনা।
প্রসঙ্গত আত্রেয়ী নদীর উপর বাংলাদেশে রাবার ড্যাম নির্মানের ফলে প্রতিবছর দক্ষিন দিনাজপুর জেলার কৃষকেরা চাষবাস নিয়ে চরম জল সংকটে পড়তেন। যা উপলব্ধি করে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে বালুরঘাটের চকভৃগু এলাকায় আত্রেয়ী নদীর বুকে ড্যাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। যা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প বলেও দাবি করেন অনেকে। প্রায় দু বছর আগে চকভৃগু এলাকায় সেই বাধ নির্মানের কাজ শেষও করে সেচ দপ্তর। যদিও প্রথম থেকেই এই কাজ নিয়ে নিম্নমানের অভিযোগ তুলে আসছিল স্থানীয় বাসিন্দারা। রবিবার বিকেলে শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সেই চকভৃগু এলাকায় বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে আত্রেয়ী নদীর বাধের বিপুল অংশ। যেখান দিয়ে হু হু শব্দে জল বয়ে আসতে শুরু করলে বাসিন্দাদের মধ্যে তুমুল আতঙ্ক তৈরি হয়। নিম্নমানের কাজের জন্যই খরার মরশুমে এভাবে বাধ ভেঙ্গে পড়ছে দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সোমা চক্রবর্তী ও রাজকুমার হালদাররা বলেন, বিকট শব্দে ভেঙ্গে পড়েছে বাঁধের বিপুল অংশ। সারারাত আতঙ্কে ঘুমোতে পারেননি এলাকার বাসিন্দারা। ছোট ছোট ফুটো দিয়ে প্রথমে কিছু জল ঢুকছিল, তারপরেই সিড়ি সহ বাধের বিরাট অংশ ভেঙে তলিয়ে গিয়েছে। জীবন হাতে নিয়ে এলাকার মানুষজনকে থাকতে হচ্ছে।
বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র বলেন, ঘটনার খবর পেয়েই থানার আইসি কে নিয়ে এলাকায় ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন, মেরামতির কাজও শুরু করে দেয়া হয়েছে তবে এ নিয়ে আতঙ্কের কোন কিছু নেই।
এদিকে বাঁধ ভেঙে পড়ার ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল রাজনৈতিক চাপানউতোরও। প্রশাসনের তরফে আশ্বাস মিললেও, বাসিন্দাদের বিশ্বাস নেই। প্রশ্ন একটাই— এই বাঁধ কি সত্যিই টিকবে? নাকি বর্ষায় আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে?