মারধরের ভয়ে হাসপাতাল ছেড়ে পালাল রোগী! প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা, তোলপাড় বালুরঘাট হাসপাতাল
বালুরঘাট, ১৫ ফেব্রুয়ারী —- সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মারধরের শিকার! সেই আতঙ্কে প্রাণ বাঁচাতে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিলেন এক মহিলা রোগী। শনিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে উদ্ধার করে ফের ভর্তি করালেও, পরিবারের সদস্যরা আর ঝুঁকি নিতে রাজি হননি। শেষমেশ, রাতেই হাসপাতাল ছাড়লেন রোগী।
তপনের বালাপুরের বাসিন্দা মামনি বর্মন শুক্রবার স্বামী বাসুদেব বর্মনের সঙ্গে বাইকে বেরিয়েছিলেন। পথে দুর্ঘটনা, মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। তৎক্ষণাৎ বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। যেখানকার সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছিল তার। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি।
খোঁজাখুঁজির পর জানা যায়, শহরের শিবতলী এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন মামনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফের হাসপাতালে ফিরিয়ে আনলেও, তাঁর বক্তব্য শোনার পর নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধে।
হাসপাতালে ফিরেই মামনি জানান, সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে থাকা সাদা পোশাকের কয়েকজন কর্মী তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। “সকাল থেকেই অত্যাচার চলছিল, সহ্য করতে না পেরে পালিয়েছি! হাসপাতালে থাকলে হয়তো রক্ষা পেতাম না!”— কাঁদতে কাঁদতে বলেন তিনি।
স্ত্রীর মুখে এমন অভিযোগ শুনে রীতিমতো হতবাক বাসুদেব বর্মন। “সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে কেউ মারধরের শিকার হন? আমরা কোনও ঝামেলা চাই না, কিন্তু এই ঘটনার জবাবদিহি দরকার। হাসপাতাল থেকে স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছি, এখানে আর রেখে কোনও ঝুঁকি নিতে পারব না!”— ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের দাবি, “এমন কিছু ঘটেনি, রোগী হয়তো ভুল বুঝেছেন।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। একজন গুরুতর আহত রোগী কীভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে পালিয়ে যেতে পারেন? যদি তাঁর অভিযোগ মিথ্যে হয়, তবে কেন তিনি আতঙ্কে হাসপাতাল ছাড়বেন? সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার নামে যদি রোগীদের এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়, তবে তাঁদের ভরসা কোথায়?
রোগীর পরিবারের অভিযোগ, “সরকারি হাসপাতালে যদি রোগী মারধরের শিকার হন, তাহলে সাধারণ মানুষের আর কোথায় যাওয়ার জায়গা?”
এই ঘটনায় হাসপাতালের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হলেও, এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে এই ঘটনা যে স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার আরও একবার বড়সড় ধাক্কা দিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।