অন্ধকারে বিধায়করা, গোপনে তৈরি হচ্ছে মন্ডল সভাপতিদের তালিকা! ফেসবুক পোস্ট করে বিস্ফোরক সত্যেন রায়

0
61

অন্ধকারে বিধায়করা, গোপনে তৈরি হচ্ছে মন্ডল সভাপতিদের তালিকা! ফেসবুক পোস্ট করে বিস্ফোরক সত্যেন রায়

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৭ ফেব্রুয়ারী ——- বিজেপির অন্দরমহলে আগুন! দক্ষিণ দিনাজপুরে মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন ঘিরে প্রকাশ্যে ফুঁসে উঠলেন গঙ্গারামপুরের বিজেপি বিধায়ক সত্যেন্দ্রনাথ রায়। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করে ফেসবুকে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি। অভিযোগ, “বিধায়কদের কোনো গুরুত্ব নেই! দল চালাচ্ছেন কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা, যাদের একমাত্র লক্ষ্য নিজেদের ক্ষমতা কায়েম করা।”

রবিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের ২৬টি মণ্ডলের মধ্যে ১৭টি মণ্ডলের সভাপতির নাম ঘোষণা করে জেলা বিজেপি। কিন্তু তালিকা প্রকাশ হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সত্যেন্দ্রনাথ রায়। তাঁর অভিযোগ, “গঙ্গারামপুরের করদহ ও ভিকাহার মণ্ডল সভাপতিদের আমি চিনি না! নির্বাচিত বিধায়ক হয়েও আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি দলের পরীক্ষিত কর্মীদের নাম সুপারিশ করেছিলাম, অথচ সেই নাম বাদ দিয়ে অন্যদের চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা কোনো গণতন্ত্র নয়, এটা দলীয় ষড়যন্ত্র!”

তিনি আরও দাবি করেন, “যারা বিধানসভা নির্বাচনে আমাকে হারানোর চেষ্টা করেছিল, তাদের কথাতেই এখন দল চলছে। আগামী নির্বাচনেও আমাকে হারানোর চক্রান্ত হচ্ছে।” দলের বিরুদ্ধে খোদ বিজেপি বিধায়কের এমন পোস্টকে ঘিরে রীতিমতো হইচই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরে।

শুধু গঙ্গারামপুর নয়, বালুরঘাটেও মণ্ডল সভাপতি নিয়োগে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিধায়কদের আপত্তির মুখে বালুরঘাটের মণ্ডল সভাপতিদের নাম ঘোষণাই স্থগিত রাখতে হয়েছে। অথচ গঙ্গারামপুরে প্রতিবাদ সত্ত্বেও সেই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় দলের একাংশের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর বিজেপির সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জানিয়েছেন , “এটি একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। কে কী পোস্ট করেছেন, তা আমি দেখিনি।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জেলা নেতৃত্ব এই বিদ্রোহের আঁচ কমানোর বদলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যা আগামী দিনে আরও বড় ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে।

বিজেপির এই গোষ্ঠীসংঘাতকে হাতিয়ার করে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “বিজেপি যে উশৃঙ্খল দল, তা এবার সত্যেনবাবুও হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন! বিজেপির অন্দরে যে প্রবল কোন্দল, তা সামনে আসতে শুরু করেছে। ভাঙন এখন সময়ের অপেক্ষা।”

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপির রাজ্য সংগঠনে ভাঙনের ছবি স্পষ্ট হচ্ছিল। মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন ঘিরে সেই বিভক্তি আরও প্রকট হয়ে উঠল। বিশেষত, নির্বাচিত বিধায়করা যদি এভাবে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাতে শুরু করেন, তাহলে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এটি বিজেপির জন্য বড়সড় সংকেত হয়ে উঠতে পারে।

এই বিদ্রোহের আগুন কি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, নাকি বিজেপির অন্দরেই আরেকটি বড়সড় ‘বিস্ফোরণ’ অপেক্ষা করছে? রাজনৈতিক মহল এখন তাকিয়ে ভবিষ্যতের দিকে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here