বালুরঘাটের “স্পিড স্টার” ফিরলো বীরের বেশে! সুমিতের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে রঞ্জিতে ইতিহাস বাংলার
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৭ ফেব্রুয়ারী —–
আকাশে উড়ছে রঙিন আবির, বাজছে ব্যান্ড, গলায় মালার ভার— যেন কোনও যুদ্ধ জিতে ফিরেছেন তিনি! ঠিকই ধরেছেন, বাংলার নতুন ‘গতিদানব’ সুমিত মহন্তই এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। রঞ্জি ট্রফির প্রথম ম্যাচেই পাঞ্জাবের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দিলেন সাত উইকেট নিয়ে। বাংলার দাপুটে জয়ের নায়ক এখন বালুরঘাটের নয়নমণি। সোমবার সকালে ট্রেন থেকে নামতেই যা ঘটল, তা ইতিহাস!
ব্যান্ড পার্টির তালে নাচ, হুড খোলা গাড়িতে শহর পরিক্রমা— একেবারে নায়কের মতো সংবর্ধনা পেলেন সুমিত। ছোট থেকে বড়, সকলের মুখে একটাই স্লোগান— “সুমিত মহন্ত, বালুরঘাটের গর্ব!” স্টেশন থেকে বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে মানুষের ঢল। যেন কোনও আন্তর্জাতিক তারকা ফিরেছেন নিজের শহরে।
পাওয়ার হাউস এলাকায় নিজের বাড়ির সামনে বাবা শিবেষ মহন্ত ও মা অপেক্ষায়। ট্রেন থেকে নামতেই কপালে চুমু এঁকে দিলেন মা, আবেগে গলা ধরে এল বাবার। মিষ্টিমুখ করিয়ে বললেন, “আজ আমাদের নয়, গোটা জেলার স্বপ্নপূরণ হলো!”
ছোটবেলায় রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনভর ক্রিকেটেই ডুবে থাকতেন সুমিত। বাবা সেনাকর্মী, পরে শিক্ষকতা শুরু করেন। প্রথমে খেলার প্রতি ছেলের অগাধ আগ্রহ দেখে একটু দোটানায় ছিলেন, কিন্তু পরে পুরো সমর্থন দেন। ২০১২ সাল থেকে কলকাতার বিভিন্ন ক্লাবে খেলার পর নজর কাড়েন সিএবির। এবার ১৮ জনের রঞ্জি স্কোয়াডে জায়গা পেয়েই বাজিমাত!
রবিবার রাতেই কলকাতায় ট্রেনে ওঠার আগে শুভেচ্ছা জানাতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র। বললেন, “আমাদের জেলা থেকে প্রথমবার রঞ্জিতে ক্রিকেটার! এই গর্ব ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এবার ওকে আইপিএল ও জাতীয় দলে দেখতে চাই।”
স্ত্রী পাপিয়া মন্ডল বলেন, “প্রথম রঞ্জি ম্যাচে ওর পারফরম্যান্স দেখে আমাদের চোখে জল এসে গিয়েছিল। আমি ওর কঠিন লড়াইটা খুব কাছ থেকে দেখেছি।”
প্রতিবেশী পপি দাস গোস্বামীর কথায়, “ছোট থেকেই ওর ক্রিকেটের প্রতি পাগলামি ছিল। ওর হাতে বল থাকলে মনে হতো, একদিন না একদিন ইতিহাস লিখবেই! আজ সেটা সত্যি হলো।”
শহরবাসীর এমন ভালোবাসায় আপ্লুত সুমিত মহন্ত বলেন, “এতটা সংবর্ধনা, এত ভালোবাসা পাব ভাবিনি! এই সমর্থনই আমাকে আরও এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে। এখন লক্ষ্য একটাই— রঞ্জিতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স রেখে আইপিএলে জায়গা করে নেওয়া।”
বালুরঘাটের অলিগলি থেকে কলকাতার ইডেন— সব জায়গায় এখন একটাই আলোচনা, বাংলার নতুন গতিদানব কে? উত্তর একটাই— সুমিত মহন্ত! মাঠে নামলেই আগুন ঝরানো গতি, সুইং আর নিখুঁত ইয়র্কারে ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়ে দেন। বাংলা পেয়ে গেল তার নতুন পেস তারকা। এবার কি তার স্বপ্নের দুয়ার খুলবে? উত্তর দেবে সময়, কিন্তু একথা বলাই যায়— বাংলার পেস আক্রমণে নতুন যুগের সূচনা করলেন বালুরঘাটের সুমিত!