শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে রাস্তায় বসে পড়ুয়াদের ক্লাস! তপনের চকবলরামে শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ চিত্র
শীতল চক্রবর্তী, বালুরঘাট, ১৮ ফেব্রুয়ারী —— সকাল সাড়ে দশটা। অন্যদিনের মতোই ব্যাগ কাঁধে স্কুলে ছুটে এসেছে খুদে পড়ুয়ারা। কিন্তু সামনে তালাবন্দি গেট! ভিতরে নেই কেউ, শিক্ষকরা তখনও আসেননি। উপায় না দেখে রাস্তায় বসেই শুরু হল পড়াশোনা! দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপনের চকবলরাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মঙ্গলবারের এই দৃশ্য দেখে রীতিমতো তোলপাড় গোটা গ্রাম।
তপন ব্লকের গোফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৬। নিয়ম অনুযায়ী সকাল সাড়ে দশটায় স্কুল খোলার কথা, ১০টা ৪৫-এ জাতীয় সংগীত হওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ, প্রায় প্রতিদিনই ১১টা পার হয়ে যায়, তবু স্কুলের দরজা খোলে না। তালা ঝুলতে দেখলেই মাটিতে বসে যায় ছোট ছোট পড়ুয়ারা, বই খুলে শুরু করে নিজেদের মতো পড়াশোনা।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ইশা হেমব্রমের গলায় হতাশা, “অনেকক্ষণ আগেই এসেছি। স্কুল খোলেনি, শিক্ষকরা আসেননি, তাই বই খুলে পড়ছি।” প্রথম শ্রেণির ছোট্ট এক ছাত্রের কথায়, “মাস্টারমশাইরা দেরি করে আসেন। কখনও আসেন, কখনও আসেন না। আসলে পড়াশোনা হয়, না হলে বাড়ি চলে যাই।”
এই স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা তিনজন। তবে মঙ্গলবার দেখা মিলল না প্রধান শিক্ষক সম্রাট সরকার ও আরও এক শিক্ষকের। অন্য শিক্ষক নজরুল শেখ কিছুটা ঠোঁট কাপতে কাপতে এসে বললেন, “প্রতিদিন ঠিক সময়েই আসি, তবে আজ একটু দেরি হয়েছে।” প্রধান শিক্ষক ব্যাঙ্কের কাজে বেরিয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, প্রায় প্রতিদিনই কেন এই অনিয়ম? ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এত উদাসীনতা কেন?
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর ছড়াতেই নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। চেয়ারম্যান সন্তোষ হাসদা জানিয়েছেন, “ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। স্কুল পরিদর্শককেও ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।”
কিন্তু শুধু শোকজ করলেই কি বদলাবে পরিস্থিতি? বছরের পর বছর ধরে শিক্ষকরা যদি এভাবেই গাফিলতি দেখিয়ে যান, তাহলে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কোন অন্ধকারের দিকে এগোবে? প্রশ্ন তুলছেন খুদে পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। তারা বলেন “শিক্ষকেরা যদি দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে এই শিশুরা ভবিষ্যতে কী শিখবে?”
স্কুলের তালাবন্দি দরজার সামনে বসে থাকা ছোট ছোট মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে বারবার সেই প্রশ্নই উঠছে—এত অনিয়মের দায় কে নেবে?