রিফানের দুরন্ত দৌড়ে ইতিহাস! সিভিকের ছেলের হাত ধরেই রাজ্যসেরা খেতাব পেল দক্ষিণ দিনাজপুর।
বালুরঘাট, ১ মার্চ —– ট্র্যাকে নেমেছিল ছোট্ট পা দু’টি। কয়েক সেকেন্ডের ঝড়, আর তারপরই দক্ষিণ দিনাজপুর পেল নতুন নায়ক! পশ্চিম মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত ৪০তম রাজ্য বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ৭৫ মিটার দৌড়ে সবার আগে ফিনিশ লাইনে পৌঁছে রাজ্যসেরা হয়ে গেল কুরুমসুর গ্রামের ক্ষুদে বজ্রবিদ্যুৎ রিফান মন্ডল!
বয়স মাত্র সাত। কিন্তু গতি? যেন বজ্রপাত! বিপক্ষদের বহু পিছনে ফেলে তার ছোট্ট শরীরটা ছুটে চলল বিজয়ের দিকে। আর সেই মুহূর্তেই দক্ষিণ দিনাজপুরের ক্রীড়া ইতিহাসে জুড়ে গেল এক নতুন অধ্যায়।
বাবা সিভিক ভলেন্টিয়ার, মা গৃহবধূ। অর্থকষ্ট তাদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে কখনও বাধা হয়নি। গ্রামের স্কুল কুরুমসুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা রিফান মাঠে নামলেই বদলে যায় দৃশ্যপট। ছোট মাঠ থেকে শুরু, তারপর অঞ্চল, জেলা, আর এখন রাজ্য জয়!
“ওর চোখে সবসময় একটা জেদ ছিল! আত্মবিশ্বাস ছিল দুর্দান্ত! কেউ ওকে হারাতে পারবে না, এটাই মনে গেঁথে নিয়েছিল রিফান,” বলছিলেন বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক অশোক রায়।
রিফানের এই ঐতিহাসিক জয়ের খবর পৌঁছাতেই কুরুমসুর গ্রাম যেন উৎসবের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। রিফানকে স্বাগত জানাতে ব্যানার, ফুল, ঢাকের বাদ্যিতে সাজছে গোটা এলাকা।
এই আনন্দ ছুঁয়ে গেছে জেলার শিক্ষা মহলকেও। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সন্তোষ হাসদার কথায়, “রিফান আমাদের দক্ষিণ দিনাজপুরের গর্ব। ওর প্রতিভাকে আরও বড় জায়গায় পৌঁছে দিতে আমরা সবরকম সাহায্য করব।”
কিন্তু এখানেই কি থামবে রিফানের দৌড়? উত্তর ‘না’! রাজ্যজয়ের পর এখন তার স্বপ্ন জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা। ট্র্যাকে নেমে সোনা জয়ের তৃষ্ণা আরও বেড়েছে।
গ্রামের ছেলে রিফান একদিন হয়তো জাতীয় পতাকা বুকে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দৌড়াবে। দারিদ্র্যের শিকল ছিঁড়ে, অসম্ভবকে সম্ভব করাই তো তার চিরচেনা অভ্যাস!