সরকারি স্কুলের শিক্ষক, অথচ বেসরকারী স্কুলের কর্ণধার! প্রশাসনের নাকের ডগায় কুশমন্ডির রাসনেউল আলমের কোটি টাকার স্কুল ব্যবসা
বালুরঘাট, ৫ মার্চ —— সরকারি শিক্ষকের কাজ ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়া, কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডির এক শিক্ষক সেই দায়িত্ব ভুলে গড়ে তুলেছেন ব্যক্তিগত শিক্ষা সাম্রাজ্য! আমিনপুর হাইস্কুলের শিক্ষক হয়েও জেলার একাধিক বেসরকারি স্কুলের কর্ণধার তিনি! সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, অথচ প্রশাসন যেন চুপচাপ বসে আছে। প্রশ্ন উঠছে, রাসনেউল আলম কি তবে আইনের ঊর্ধ্বে ?
সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী, কোনও শিক্ষক টিউশন পর্যন্ত করতেও পারেন না, সেখানে একাধিক স্কুল চালানো তো গুরুতর অপরাধ। অথচ বছরের পর বছর ধরে দক্ষিণ দিনাজপুরে একাধিক মডেল স্কুল ও ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তিনি। অভিযোগ, নিজের সরকারি চাকরিটাকে নিরাপত্তার ঢাল বানিয়ে তিনি অবৈধ ব্যবসার জাল বিস্তার করেছেন।
এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মিত হাজিরার অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, সরকারি স্কুলের দায়িত্ব ফেলে তিনি ব্যস্ত নিজের স্কুল সাম্রাজ্য সামলাতে। অথচ আমিনপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ বর্মন বলেন, “তিনি নিয়ম মেনে ছুটি নেন।” তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, নিয়মমাফিক ছুটি নিলেই কি অন্য ব্যবসা চালানো যায়?
যদিও জেলাতে যে তার একাধিক বেসরকারি স্কুল রয়েছে এবং সেগুলির যে তিনি কর্নধার হিসেবে রয়েছেন তার কথা স্বীকার করেছেন আমিনপুর হাইস্কুলের ওই অভিযুক্ত শিক্ষক রাসনেউল আলম।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে জেলা শিক্ষা দপ্তরও। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবাশীষ সমাজদার বলেন, “সরকারি শিক্ষক হয়ে ব্যক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে এক্ষেত্রে শুধু প্রশাসন নয়, কড়া অবস্থান নিয়েছে তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনও। সংগঠনের জেলা সভাপতি সুব্রত মুখার্জি বলেন, “তিনি আমাদের সংগঠনের সদস্য হলেও কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। প্রশাসনিক ও দলীয় স্তর থেকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জানা গেছে, ২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গে এক সরকারি কর্মী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে চাকরি হারিয়েছিলেন। টানা পাঁচ বছর তদন্তের পর চলতি বছরে তাকে বরখাস্ত করে রাজ্য সরকার। শিক্ষকদের জন্যও স্পষ্ট আইন রয়েছে—কেউ ব্যবসা করতে পারবেন না। তাহলে কুশমণ্ডির এই শিক্ষক এতদিন কীভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় এই শিক্ষা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, প্রশাসন কেন এতদিন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি? সরকারি নিয়ম ভেঙে একের পর এক স্কুল খুললেন, অথচ কোনও তদন্তই হল না? নাকি প্রশাসনেরই কোনো শক্তিশালী গোষ্ঠীর মদতে এতদিন তিনি নির্ভয়ে এই কাজ চালিয়ে গেছেন?
জেলা জুড়ে এখন চরম চাঞ্চল্য—এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি সত্যিই প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে, নাকি সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যাবে? দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ এখন চেয়ে আছে, সত্যিই কি শিক্ষা দপ্তর ও প্রশাসন এবার কড়া পদক্ষেপ নেবে, নাকি আবারও সবকিছু রয়ে যাবে ফাইলের পাতা ও ক্ষমতার অলিন্দে চাপা পড়ে ?