দিনে শিক্ষক-শিক্ষিকার ঝগড়া, রাতে স্কুলে সমাজবিরোধীদের তান্ডব!

0
56

দিনে শিক্ষক-শিক্ষিকার ঝগড়া, রাতে স্কুলে সমাজবিরোধীদের তান্ডব! আতঙ্কে বালুরঘাটের শান্তিকলোনী এলাকার বাসিন্দারা

বালুরঘাট, ৭ মার্চ —–– একদিকে শিক্ষকদের বিবাদ, অন্যদিকে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য—বালুরঘাট শহরের শান্তিকলোনী এফ পি স্কুল যেন এখন দ্বৈত সংকটে জর্জরিত। দিনের আলোয় স্কুল চত্বরে শিক্ষকদের কলহ, রাতের অন্ধকারে অসামাজিক কার্যকলাপ—এই দুই মিলে সরকারি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্যত এক বিপজ্জনক পরিণতির দিকে এগোচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, অভিভাবকদের একাংশ এখন স্কুলে সন্তান পাঠানো নিয়েও দ্বিধায় ভুগছেন।

বালুরঘাট শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিকলোনী এফ পি স্কুলের প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুন্ডু ও সহকারী শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তীর মধ্যে বিবাদ যেন এই স্কুলের নিত্যদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনও রুদ্ধদ্বার কক্ষে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, কখনও সহকর্মীদের সামনেই তুমুল বচসা—প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন অভিযোগ জমা পড়ছে স্কুল পরিদর্শকের কাছে। তবে প্রশাসনিক স্তরে বারবার বিষয়টি আলোচিত হলেও, এই দ্বন্দ্বের কোনও সমাধান আজও হয়নি।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিক্ষকদের এই ব্যক্তিগত লড়াই এতটাই তীব্র যে, তাঁরা স্কুলের দরজা-জানালা তালাবন্ধ করেও বেরোনোর সময় পান না! ফলস্বরূপ, সন্ধ্যা নামতেই স্কুল চত্বর সমাজবিরোধীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়।

প্রতিদিন রাত হলেই স্কুল চত্বরে বসে মদের আসর, চলতে থাকে নেশা করা, এমনকি কখনও কখনও স্থানীয়দের দাবি, অপরাধমূলক কাজকর্মও ঘটে সেখানে। ভোরবেলা স্কুল চত্বরে পড়ে থাকে মদের বোতল, গুটখার প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার। ফলে এই স্কুল এখন শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, অপরাধীদেরও আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জিত বিশ্বাস ক্ষোভের সুরে বলেন, “শিক্ষকদের নিজেদের সমস্যার জন্য পুরো স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বারবার বলার পরও রাতের সময় স্কুলে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা বন্ধ হচ্ছে না। এটা একটা স্কুল, না অপরাধীদের আখড়া?”
স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তীকে প্রায় প্রতিদিনই কান্নারত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে দেখেন স্থানীয়রা। কিন্তু কেন? এই কান্নার পেছনের কারণ কি সহকর্মীর সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্ব, নাকি অন্য কোনও অজানা কারণ? বিষয়টি নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে জল্পনা বাড়ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সন্তোষ হাসদা আশ্বাস দিয়েছেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করব, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।”

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই আশ্বাসের পরও যদি স্কুল চত্বরে সমাজবিরোধীদের উপদ্রব বন্ধ না হয়? যদি শিক্ষকদের লড়াই থামার বদলে আরও বাড়তে থাকে? প্রশাসন কি সত্যিই দ্রুত ব্যবস্থা নেবে, নাকি এ ঘটনাও অন্য অনেক কিছুর মতো ধামাচাপা পড়ে যাবে? উত্তরের অপেক্ষায় পুরো এলাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here