বাংলার রঞ্জি তারকার গ্রামে বীরের প্রত্যাবর্তন! সুমিতকে বরণ করলো সমজিয়া

0
60

বাংলার রঞ্জি তারকার গ্রামে বীরের প্রত্যাবর্তন! সুমিতকে বরণ করলো সমজিয়া

বালুরঘাট, ৭ মার্চ ——- রঞ্জি ট্রফির মঞ্চে বাংলার জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। পাঞ্জাবের ব্যাটিং লাইনআপ তছনছ করে যিনি তুলে নিয়েছিলেন সাতটি উইকেট। সেই আগুনঝরা পেসার যখন নিজের শিকড়ের মাটিতে পা রাখলেন, তখন পুরো গ্রাম যেন রূপকথার এক অধ্যায়ে ঢুকে পড়ল। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম সমজিয়া—যেখানে শৈশব কেটেছিল সুমিত মহন্তর, সেখানেই শুক্রবার হল তাঁর বীরের সংবর্ধনা।

শৈশবের সঙ্গীরা, চেনা মাঠ, পরিচিত গলি—সব কিছুই যেন এক মুহূর্তে বদলে গেল। তাঁকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসলেন সমজিয়ার মানুষ। কেউ মোবাইলে মুহূর্ত বন্দি করলেন, কেউ সুমিতের হাত ধরে চোখের জল ফেললেন। তাঁর বাবা শিবেষ মহন্তও আবেগ চেপে রাখতে পারলেন না। বললেন, “সুমিত আমাদের নয়, এখন গোটা জেলার গর্ব। ওর জন্যই আজ দক্ষিণ দিনাজপুরের নাম উঠে এল দেশের ক্রিকেট মানচিত্রে।”

সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল কৃষ্ণপুর স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব। বালুরঘাটের বিশিষ্ট শিক্ষিকা পৌলমী চক্রবর্তী বললেন, “এই জেলা থেকে ক্রিকেটে এত বড় সাফল্য আগে আসেনি। সুমিত দেখিয়ে দিল, সীমান্তের ছোট্ট গ্রাম থেকেও দেশের মঞ্চে পৌঁছানো সম্ভব।” সমাজসেবী ধীরাজ অধিকারীও বললেন, “আজকের দিনটা শুধু সুমিতের সাফল্যের নয়, গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরের আত্মবিশ্বাসেরও জয়।”

সুমিত শুধু সংবর্ধনা নিতে আসেননি, সঙ্গে এনেছেন অনুপ্রেরণার বার্তা। মাঠে নামলেন, গ্রামের শিশু-কিশোরদের শেখালেন বোলিংয়ের খুঁটিনাটি, ব্যাটিংয়ের কৌশল। যেন তিনি শুধু এক ক্রিকেটার নন, এক দিশারী। তাঁর স্ত্রী পাপিয়া মন্ডল বললেন, “সুমিতের হাত ধরে আজ জেলার মানুষ বুঝতে পারছে, ক্রিকেট শুধুই খেলা নয়, কর্মসংস্থানেরও বড় রাস্তা হতে পারে।”

কিন্তু সবচেয়ে বেশি আবেগ ছুঁয়ে গেল সুমিতের নিজের অনুভূতি। বললেন, “এখানেই আমি ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। আজ এখানে এসে মনে হচ্ছে, যেন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। এই ভালোবাসাই আমার শক্তি।”

কৃষ্ণপুর স্পোর্টস এন্ড কালচারাল ক্লাবের সম্পাদক সাহেনশা মোল্লা বললেন, “এতদিন এখানকার ছেলেরা শুধু কৃষক বা শ্রমিক হওয়ার স্বপ্ন দেখত। এখন সুমিত তাদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে—ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন!” তাকে সন্মান জানাতে পেরে তারা গর্বিত।

দক্ষিণ দিনাজপুরের সীমান্ত ঘেরা গ্রাম থেকে রঞ্জি ট্রফির মঞ্চ—সুমিতের যাত্রা যেন শুধুমাত্র এক ব্যক্তির সাফল্য নয়, গোটা জেলার প্রত্যেক স্বপ্নদেখা ছেলেমেয়ের জন্য এক অনুপ্রেরণা। সমজিয়া আজ আর শুধুই এক গ্রাম নয়, এটা এক সম্ভাবনার নাম। সীমান্ত পেরিয়ে জাতীয় স্তরে পৌঁছানোর স্বপ্ন এখন আরও অনেকের চোখে—আর সেই স্বপ্নের ভিত গড়লেন সুমিত মহন্ত!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here