ট্রেনযাত্রার মায়াজাল! বন্ধুত্বের অভিনয়ে সর্বস্বান্ত বালুরঘাটের শ্রমিক

0
66

ট্রেনযাত্রার মায়াজাল! বন্ধুত্বের অভিনয়ে সর্বস্বান্ত বালুরঘাটের শ্রমিক, উধাও ২৭ হাজার টাকা

বালুরঘাট, ১২ মার্চ —– রাতের ট্রেন, দীর্ঘ পথ, একাকী যাত্রা। এমন সময় এক অচেনা সহযাত্রীই যেন হয়ে উঠলেন কাছের মানুষ! কথায় কথায় গড়ে উঠল সখ্যতা— সিট পাইয়ে দেওয়া, খাবার ভাগ করে নেওয়া, মোবাইলে লুডু খেলার হাসি-ঠাট্টা। মুহূর্তের বিশ্বাসে মোবাইল তুলে দিলেন হাতে, কিন্তু বুঝতেই পারলেন না— বন্ধুত্বের এই মায়াজালেই লুকিয়ে ছিল সর্বনাশের ফাঁদ! চোখের পলকেই উধাও ২৭ হাজার টাকা, হাতছাড়া একরাশ স্বপ্ন।

বালুরঘাটের পরানপুরের বাসিন্দা সুকুমার হালদার দিল্লির গুরগাঁওতে একটি কল সেন্টারে সাফাইয়ের কাজ করেন। সোমবার রাতে শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে ফারাক্কা এক্সপ্রেস ধরে বাড়ির পথে রওনা হয়েছিলেন। ট্রেনে ওঠার পরই আলাপ এক অচেনা সহযাত্রীর সঙ্গে, যে নিজেকে মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেয়। সুকুমারের সিট কনফার্ম না হওয়ায়, সে দয়াপরবশ হয়ে নিজের সিটেই বসার জায়গা করে দেয় তাঁকে। শুরু হয় গল্প, গড়ে ওঠে বিশ্বাসের ভিত।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও কাছাকাছি চলে আসে দু’জনের সম্পর্ক। সেই ব্যক্তি কখনও খাবার কিনে খাওয়াচ্ছিলেন, কখনও সময় কাটানোর জন্য মোবাইলে লুডু খেলার প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। সুকুমারের ফোনে লুডু না থাকায়, তিনি নির্দ্বিধায় মোবাইল তার হাতে তুলে দেন। তখনও কল্পনাও করতে পারেননি, এই ছোট্ট মুহূর্তেই শুরু হচ্ছে তাঁর সর্বনাশের খেলা!

পরদিন রাতে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি জানান, তার মোবাইল হারিয়ে গিয়েছে, বাড়িতে ফোন করতে হবে। সুকুমার এক মুহূর্তও না ভেবে নিজের মোবাইল ফের তার হাতে তুলে দেন। আর এতেই ফাঁস হয়ে গেল সুকুমারের সব ব্যাংক তথ্য! প্রথমে ফোনপে অ্যাপে সামান্য টাকা ট্রান্সফার করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে প্রতারক। তারপর ঠান্ডা মাথায় তার দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করে নেয় এবং একের পর এক লেনদেনের মাধ্যমে ২৭ হাজার টাকা উড়িয়ে দেয়!

কিন্তু এখানেই শেষ নয়! প্রতারণার ফাঁদ এমন নিখুঁত যে, মালদা স্টেশনে ট্রেন থামতেই প্রতারক মোবাইল ফেরত দিয়ে চম্পট দেয়। সুকুমার প্রথমে কিছু বুঝতে পারেননি। পরে যখন মোবাইল হাতে নেন, দেখেন পাসওয়ার্ড বদলে গিয়েছে, নেটওয়ার্ক নেই। সিম খুলে দেখেন— স্লট ফাঁকা! প্রতারক শুধু টাকাই লোপাট করেনি, মোবাইলের সিমটাও খুলে নিয়ে গিয়েছে, যাতে সে আর কোনওভাবেই ব্যাঙ্কের তথ্য পুনরুদ্ধার করতে না পারেন। একই কৌশলে তার শ্যালকের মোবাইল থেকেও কয়েক হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়!

সব হারিয়ে মাথায় হাত সুকুমারের! বুধবার তিনি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর কাতর আর্তি— “পরিশ্রমের টাকা মুহূর্তে গায়েব হয়ে গেল! প্রশাসন দয়া করে কিছু করুন, যাতে অন্তত আমার উপার্জন ফেরত পাই!”

সাইবার প্রতারণার এই ভয়ংকর ঘটনা ফের একবার সতর্ক করে দিল সমস্ত ট্রেনযাত্রীকে— অপরিচিতের প্রতি বিশ্বাস কি সত্যিই নিরাপদ? নাকি মুহূর্তের সৌজন্যতাই বয়ে আনবে নিঃস্ব হওয়ার যন্ত্রণা?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here