স্বাধীনতার পর গ্রামের প্রথম পাকা রাস্তা নির্মানেও নিম্নমানের সামগ্রী! চাপে ঠিকাদার, বন্ধ ঢালায়ের কাজ

0
35

স্বাধীনতার পর গ্রামের প্রথম পাকা রাস্তা নির্মানেও নিম্নমানের সামগ্রী! চাপে ঠিকাদার, বন্ধ ঢালায়ের কাজ

বালুরঘাট, ১৩ মার্চ —– বহু বছরের অবহেলা, আন্দোলন, বঞ্চনার পর অবশেষে স্বাধীনতার পর প্রথমবার পাকা রাস্তার স্বপ্ন দেখেছিল কামারপাড়া-কুতুবপুরের মানুষ। কিন্তু সেই স্বপ্নের রাস্তাই এখন দুর্নীতির কালো ছায়ায় ঢেকে গেছে! নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে ফুঁসছে গোটা গ্রাম। সরব হয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধানও। প্রবল চাপে পড়ে ঢালাই কাজ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছেন ঠিকাদার। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি বালুরঘাটের অমৃতখন্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের কামারপাড়া এলাকার।

পঞ্চায়েত সুত্রের খবর অনুযায়ী, প্রায় ৩১ লক্ষ টাকা বরাদ্দে ৬৭৫ মিটার দীর্ঘ ঢালাই রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল কামারপাড়া এলাকায়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই রাস্তাটি, যা বর্ষাকালে পরিণত হতো কর্দমাক্ত নরকে। ভোট বয়কটের মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল গ্রামবাসীদের। সেই চাপেই সরকারি বরাদ্দ পেয়ে কাজ শুরু হয়। কিন্তু সেই কাজ শুরুর পরই প্রকাশ্যে আসে ভয়ংকর অনিয়ম!

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ঢালাইয়ের জন্য যে মানসম্পন্ন পাথর ব্যবহার করার কথা, তার বদলে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। শুধু তাই নয়, রাস্তার পাড় মজবুত করার জন্য গাছের গুড়ি কিংবা বাঁশের ব্যবহার যেখানে বাধ্যতামূলক, সেখানেও চলছে গাফিলতি!

চঞ্চল টুডু নামে এক গ্রামবাসীর অভিযোগ, “আমাদের গোটা জীবন কেটেছে কর্দমাক্ত পথ মাড়িয়ে। অবশেষে পাকা রাস্তার স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু এখন দেখছি দুর্নীতির নতুন নাটক! আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।”

শুধু সাধারণ মানুষ নন, এই অনিয়মে বেজায় ক্ষুব্ধ পঞ্চায়েত প্রধান দেবদূত বর্মনও। তিনি বলেন রাস্তা নির্মানের জন্য সঠিক পাথর ব্যবহার হচ্ছে না। যা দেখতে পেয়েই সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। তিনি চান এলাকায় সঠিকভাবে রাস্তা তৈরি হোক।

গ্রামবাসীদের ক্রমাগত বিক্ষোভের মুখে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন ঠিকাদার সংস্থার প্রতিনিধি দিবাকর দাস। তিনি জানান, “নিম্নমানের পাথর ব্যবহারের অভিযোগ আসার পরই কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। আমরা নিম্নমানের পাথর সরিয়ে গ্রামবাসীদের দাবি অনুযায়ী উন্নতমানের উপকরণ দিয়েই রাস্তা তৈরি করব।”

এখন একটাই প্রশ্ন—আদৌ কি মিলবে কাঙ্ক্ষিত রাস্তা, নাকি দুর্নীতির শিকার হবে স্বপ্ন?

সরকারি প্রকল্পের নামে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়, কিন্তু কামারপাড়ার মানুষ এবার আর মাথা নোয়াতে রাজি নন। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—”দুর্নীতি মানি না, সঠিক রাস্তা চাই!”

এখন দেখার, গ্রামবাসীদের প্রতিবাদে সত্যিই সঠিক রাস্তা তৈরি হয়, নাকি আবারও ফাইলের পাতায় চাপা পড়ে যায় এক টুকরো স্বপ্ন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here