মানবিক ওসি, মানবিক গাজোল। আবারো গাজোল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হারাধন দেবের মানবিক মুখ দেখলো গাজোলবাসি।

0
835

গাজোল, সব্যসাচী মন্ডল:- মানবিক ওসি, মানবিক গাজোল। আবারো গাজোল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হারাধন দেবের মানবিক মুখ দেখলো গাজোলবাসি। নিজের ডিউটি ছাড়াও বিভিন্ন সমাজ সেবার কাজে যুক্ত গাজোল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হারাধন দেব বিগত দিনে মুর্শিদাবাদ জেলার এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচিয়ে তার ঘরে ফিরিয়ে দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে তবে এবারের গল্পটা একটু অন্য। করোনা সংক্রমণ নিয়ে জারি হওয়ার লকডাউন এর জেরে এক অসহায় আদিবাসী মহিলার পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার পরিচয় দেন তিনি। পাশাপাশি ওই মহিলার তিন সন্তানসহ তার খাদ্য যোগানের দায়িত্বভার নেন।
লোকের কাছে চেয়েমেয়ে দীর্ঘদিন একবেলা পেটে খেয়ে চলছিল সংসার, কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে তাই আর মিলছে না খাবার। অভুক্ত রাখতে হচ্ছে তিন ছেলেমেয়েকে। ছেলে মেয়ের শরীর খারাপ ডাক্তার দেখাতে পারছেন না। অবশেষে এদিন দুপুরে খাবার জোগাড়ের আশায় গাজোল ব্লকের দেওতলা অঞ্চলের বানিয়াপাড়া এলাকা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে ব্লক দপ্তরে আসেন বানিয়া পাড়ার বাসিন্দা মার্গারেট হাঁসদা। আশা ছিল ব্লক দপ্তরে অনেক অফিসার সাহেবরা থাকেন তাদের কাছ থেকে হয়তো মিলতে পারে কিছু। ব্লকে এসে সবার কাছে প্রার্থনা জানিয়ে মিলেনি কিছু। দেখা মেলে সংবাদমাধ্যমের সাথে। সংবাদমাধ্যমের সামনে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে অসহায় আদিবাসী মহিলার। তিনি জানান স্বামী চন্দন মার্ডি, ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে লকডাউন এ আটকে পড়েছেন,স্বামীর কাছে টাকা পয়সা শেষ পাঠাতে পারছেন না টাকাপয়সা। মার্গারেট দেবি অবশেষে স্থানীয় রাইস মিল থেকে ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট অংশ তুলে নিয়ে এসে তা পরিষ্কার করে বাজারে বেচে যতটুকু পয়সা হতো তাতে করে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতেন তিনি। কিন্তু লক দাওনি বন্ধ রয়েছে রাইস মিল, যার ফলে সেটিও আর জুটছে না। দিন কয়েক লোকের কাছে চেয়েমেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে যার ফলে সেটিও আর জুটছে না। মিলছে না রেশন,এই পরিস্থিতিতে ছয় মাসের পুত্র সন্তানের শরীর খারাপ কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না সন্তানের। ছয় মাসের বাচ্চা শিশুদের মুখেও তুলে দিতে পারছে না খাবার। অবশেষে অসহায় অবস্থায় ছয় মাসের পুত্রসন্তান টিকে কোলে নিয়েই ১৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে ব্লক দপ্তরে এসেছিলেন খাবার যোগাড়ের তাগিদে যা আশা ছিল তা যে পূরণ হয়নি। এরপরই সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় গাজোল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হারাধন দেবের সাথে। সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা জানতে পেরে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তিনি। ঘটনাস্থলে এসে অসহায় মহিলার সাথে কথা বলেন। দিন কয়েকের জন্য চাল ডাল আলু সহ খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন অসহায় মহিলার হাতে। হাতে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেন ছেলের খাবার দুধ ও চিকিৎসা করার জন্য। টোটো তে করে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেন তিনি। এমনকি এই লকডাউন পরিস্থিতিতে যতদিন তাদের এই করুন অবস্থা রয়েছে ততদিন তাদের খাবার জোগানোর দায়িত্ব নেন তিনি। তার এই মানবিক উদ্যোগ দেখে আপ্লুত গাজোলবাসী।
গাজোল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হারাধন দেব এর হাত থেকে খাবার সামগ্রী পেয়ে আনন্দিত আদিবাসী মহিলা। তিনি জানালেন গাজোল থানার বড়বাবু সবদিক থেকে তাকে সহযোগিতা করেছেন। এতদিন তিনি ভগবানকে চোখে দেখেননি তবে ভগবান যে আছে সে বিশ্বাসটুকু আজ হল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here