বিএসএফের দাদাগিরি! ভারতীয় হয়েও একবছরে দুয়ারে রেশন পৌঁছায় নি হিলির কাটাতারের ওপারের গ্রামে। ক্ষোভ মহিলাদের। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কাড়ার চেষ্টা, অভিযোগ বাম-তৃণমূলের
পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৯ এপ্রিল ——– হিলিতে বিএসএফের দাদাগিরির জের, একবছরেও কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় বাসিন্দাদের দুয়ারে পৌঁছায়নি রেশন। ক্ষোভের সুর মহিলাদের গলায়। একবছরেরও বেশি সময় ধরে এমন সমস্যায় ভুগছেন, দাবি রেশন ডিলারের। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে কেড়ে নিতে চাইছে বিএসএফ, সীমান্ত এলাকার মানুষের দুর্দশা নিয়ে একজোটে আক্রমণ বাম-তৃণমূলের। ঘটনা জানেনই না বিজেপি নেতৃত্বরা।
ভারত-বাংলাদেশের তিনদিক সীমান্ত বেষ্টিত জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর। যার অধিকাংশ সীমান্ত অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হিলি ব্লক। যে ব্লকের একাধিক ভারতীয় গ্রাম রয়েছে কাটাতারের ওপারে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসাবে হাড়িপুকুর, উজাল, শ্রীকৃষ্ণপুর, নীচা গোবিন্দপুর ও উচা গোবিন্দপুর গ্রাম। যে গ্রামগুলিতে বিএসএফের কঠোর বিধিনিষেধের জেরে পৌছাতেই পারেনি রাজ্য সরকারের একাধিক জনদরদি প্রকল্প। যার মধ্যে অন্যতম হিসাবে উঠে এসেছে দুয়ারে রেশন প্রকল্প। সীমান্তের ওপারের গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সরকারের দুয়ারে রেশন প্রকল্প মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেবার কথা থাকলেও এই এলাকাতে বিএসএফের দাদাগিরিতে তা আজ অবধি পৌঁছাতে পারেনি। আর যার জেরে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের। প্রায় তিন কিলোমিটার হেটে গিয়েই বাসিন্দাদের সংগ্রহ করতে হয় দুয়ারে রেশন। ভারতীয় বাসিন্দা হয়েও কেন সরকারের প্রকল্প থেকে তারা বঞ্চিত থাকবেন ? সেই প্রশ্ন তুলেই সরব হয়েছেন সীমান্ত এলাকার মহিলারা। আর যা নিয়েই বিএসএফকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে বাম ও তৃণমূল নেতৃত্বরা। তাদের অভিযোগ, সীমান্তে এধরণের নিয়ম এর আগে কখনই ছিল না। মোদি ক্ষমতায় আসবার পরে সীমান্তের ওপারের ভারতীয় বাসিন্দাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে তারা। যদিও এনিয়ে তেমন কিছু জানেন না বলেই দাবি করেছেন এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব। বিএসএফ কতৃপক্ষ অবশ্য এনিয়ে কোন মন্তব্য করতে না চাইলেও, রেশন ডিলারের দাবি প্রকল্প চালু হবার পর থেকেই সীমান্তের ওপারের গ্রামবাসীদের দুয়ারে পৌঁছাতে পারে নি রেশন।
হাড়িপুকুর গ্রামের দুই মহিলা মামনি খাতুন ও রাবেয়া খাতুন বিবিরা বলেন, দুয়ারে রেশন তাদের গ্রামে পৌঁছাতে দেয়না বিএসএফ। তারা ভারতীয় হয়েও কেন সরকারী সুযোগ সুবিধা পাবেন না। প্রায় তিন কিলোমিটার হেটে এসে রেশন নিয়ে যেতে হয় তাদের।
সিপিএম নেতা নন্দলাল হাজরা বলেন, সীমান্তে এর আগে কখনও এ ধরনের নিয়ম চালু ছিল না। মোদি ক্ষমতায় আসবার পরেই সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। ভারতীয় নাগরিক হয়েও কেন তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে।
হিলি ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মিহির সরকার বলেন, বিএসএফের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ কাঁটাতারের ওপারের গ্রামের বাসিন্দারা। দুয়ারে রেশন তো দুরের কথা খাবার জন্য এক কেজি ভালো চালও নিয়ে যেতে পারেন না তারা। প্রকৃত পাচারকারীদের চিহ্নিত করে সাজা দিতে না পেরে প্রতি মুহুর্তে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন তারা।
এলাকার রেশন ডিলার নিতাই পদ সাহা বলেন, প্রকল্প চালুর পর থেকে কাটাতারের ওপারের গ্রামে বিএসএফ কখনই দুয়ারে রেশন দিতে দেয়নি। যার কারনে এপারে হিলিতে এসেই তাদের রেশন সংগ্রহ করতে হয়।
হিলি ব্লকের বিজেপির মন্ডল সভাপতি বীরেন্দ্র নাথ মাহাত বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নেবার পরেই এ ব্যাপারে বলতে পারবেন।