একশো বছরের দুর্ভোগের অবসান!

0
68

একশো বছরের দুর্ভোগের অবসান!বালুরঘাটে বন্যা সন্ত্রাস রুখতে আত্রেয়ী খাড়িকে ঘিরে ১.২৩ কোটি টাকার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৮ ফেব্রুয়ারী —– বন্যা নিয়ে প্রায় একশো বছরের দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে আশার আলো দেখাচ্ছে রাজ্য সরকার। আত্রেয়ী খাড়ির ধ্বংসাত্মক বন্যা থেকে মুক্তি দিতে এবার ৫৫০ মিটার কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ হল ১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। শনিবার ভিত্তি প্রস্তর উন্মোচন করে বালুরঘাটের আত্রেয়ী খাড়ির বাধ নির্মানের যে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। এদিকে দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে, সরকারের এমন আশ্বাসে রীতিমতো উৎসবের মেজাজ তৈরি হয় বালুরঘাটের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের একে গোপালন কলোনী এলাকায়। এদিন যে কাজের সূচনালগ্নে মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দক্ষিন দিনাজপুরের জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণা, বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র, স্থানীয় কাউন্সিলর বিপুলকান্তি ঘোষ, সুভাষ চাকি, সেচ দপ্তরের আধিকারিক অঙ্কুর মিশ্র প্রমূখ। পুরসভা ও সেচ দপ্তরের উদ্যোগে এই কাজ শুরু হয় এদিন। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে যে বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফে। আগামীতে এই খাড়িকে ঘিরে যে পর্যটন শিল্পও গুরুত্ব পাচ্ছে তার কথাও এদিন তুলে ধরেছেন মন্ত্রী তার ভাষনে।

প্রায় প্রতিবছরই আত্রেয়ী নদীর জল বাড়লে আতঙ্ক গ্রাস করে বালুরঘাট শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের একে গোপালন কলোনির মানুষকে। নদীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এই খাড়ির জল ফুলে ফেঁপে ওঠে, ভয়ংকর বেগে বয়ে যায় শহরের দিকে। বর্ষায় বহু বাড়ি তলিয়ে যায়, নদীগর্ভে বিলীন হয় একের পর এক ঘরবাড়ি। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় কলোনির বেশিরভাগ বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আশ্রয়হীন হতে হয়েছিল শতাধিক পরিবারকেও। বছর বছর ক্ষয়ক্ষতির সেই দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পেতেই দীর্ঘদিন ধরে কংক্রিটের বাঁধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী।

শনিবার যে বাঁধ নির্মাণের শিলান্যাস করে মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র বলেন, “এই প্রকল্প শুধু খাড়ির ভাঙন রোধের জন্য নয়, পুরো শহরের চেহারা বদলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সমস্যার গুরুত্ব বুঝেছেন। জেলা প্রশাসন দ্রুততার সঙ্গে প্রস্তাব পাঠানোর পরই অনুমোদন আসে। এই বাঁধ শুধু বাসিন্দাদের রক্ষা করবে না, ভবিষ্যতে পর্যটনেরও বড় সুযোগ তৈরি করবে।”

বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র জানান, “একে গোপালন কলোনির মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই বাঁধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। রাজ্য সরকার ও সেচ দপ্তর যৌথভাবে কাজ করছে। আগামীতে সৌন্দর্যায়নের মাধ্যমে খাড়িকে কেন্দ্র করে বোটিং ও ফিশিং চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।”

সরকারের এই উদ্যোগে খুশির হাওয়া একে গোপালন কলোনিতে। চোখে-মুখে স্বস্তির ছাপ এলাকাবাসীর। তারা বলছেন, “প্রতিবছর আতঙ্কে দিন কাটাতাম। এখন আশায় বুক বাঁধছি—আর বন্যায় ভেসে যেতে হবে না!”

এই বাঁধ শুধু একটা প্রকল্প নয়, এটা বালুরঘাটের ভবিষ্যতের ভিত। প্রশাসনের আশ্বাস মতো ৯০ দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হলে, এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সাক্ষী থাকবে গোটা শহর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here