জীবিত ছেলেকেই ‘মৃত’ ঘোষণা আধারে! রেশন নেই, ব্যাঙ্কে তালা— চরম দুর্ভোগ দিনমজুরের
বালুরঘাট, ২৬ ফেব্রুয়ারী —– আধার কার্ডের বিভ্রাটে যেন এক ভয়ঙ্কর পরিহাস! বাবার মৃত্যু শংসাপত্র সংশোধন করতে গিয়ে নিজেকেই ‘মৃত’ ঘোষিত হতে হল ছেলেকে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সরকারি রেশন, ব্যাঙ্কের টাকা তোলা, এমনকি নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ দেওয়ারও পথ নেই! দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর ব্লকের জাতিগ্রামের শ্রমিক হবিবুর রহমান এখন কার্যত জীবিত থেকেও মৃত!
২০১৭ সালের ২ মে মারা যান হবিবুরের বাবা জাহিরুল শেখ। সরকারি নথিতে তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্রও নথিভুক্ত রয়েছে। কিন্তু বাবার নাম সংশোধনের জন্য আধারে আবেদন করতেই ঘটে বিপর্যয়। সংশোধনের নামে বাবার পরিবর্তে আধার কার্ডে ‘মৃত’ বলে দেখানো হয় হবিবুরকেই!
এই খবর তাঁর কানে আসে তখন, যখন তিনি ভোটার তালিকায় নিজের নাম খুঁজে পান না। বিডিও অফিসে গিয়ে অভিযোগ জানানোর পর ভোটার কার্ড ফেরত পেলেও আধারের বিভ্রাট কাটেনি। সরকারি নথিতে তিনি ‘মৃত’, তাই আধার বাতিল করে দেওয়া হয়েছে!
ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন হবিবুর। সেখান থেকে ফেরার পর ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারেন, আধার লিঙ্ক না থাকায় তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ! ফলে নিজেরই উপার্জিত টাকা তুলতে পারছেন না। রেশন দোকানে গেলে বলা হয়— তিনি তো সরকারি নথিতে মৃত! তাই রেশনও বন্ধ হয়ে গেছে।
হতাশ হবিবুর বলছেন, “আমি বেঁচে থেকেও মৃত! আধার না থাকলে কি আমি আর নাগরিক নই?”
গোটা ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। হরিরামপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি মনোজিৎ সরকার বলছেন, “এ কেমন সরকার! আধার সংশোধনের নামে জীবিত মানুষকেই মেরে ফেলছে! এদেশে এখন মরার পরেও শান্তি নেই।”
অন্যদিকে, প্রশাসন তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। হরিরামপুর ব্লকের বিডিও অত্রি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হবে। সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আধার কার্ড যেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নথি, সেখানে এর ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আধারের এমন গাফিলতিতে একবার ‘মৃত’ হলে কীভাবে জীবিত হওয়া সম্ভব? সরকারি সিস্টেমের এই মারাত্মক ফাঁকফোকরের দায় কে নেবে?
হবিবুরের আর্জি এখন একটাই— “আমি বেঁচে আছি, সরকার যেন অন্তত আমাকে জীবিত বলে স্বীকার করে!”