স্কুলে তালা, পড়ুয়ারা বাইরে ! প্রধান শিক্ষক ও করণিকের অরাজকতায় লাটে উঠেছে বাসুরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার পঠনপাঠন
বালুরঘাট, ১২ মার্চ —- সকাল ১১টা ১৫। নিয়ম মেনে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা স্কুলে হাজির, কিন্তু বিদ্যালয়ের দরজায় দরজায় ঝুলছে বড়সড় তালা! জাতীয় সংগীত পাঠ নেই, ক্লাসরুম খোলার চিহ্ন নেই। হতভম্ব পড়ুয়ারা অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায়। অবশেষে যখন দরজা খোলে, তখনও পঠনপাঠন যেন দায়সারা। আর দুপুর ১টা ৩০ বাজতেই ফের ঝনঝন করে নেমে আসে তালার শিকল!
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ব্লকের বাসুরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা যেন শিক্ষার আলো থেকে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। যেখানে পড়াশোনার বদলে চলছে চূড়ান্ত অনিয়ম ও অরাজকতা। প্রায় ১২০০ ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত এই প্রতিষ্ঠানে গত কয়েক মাস ধরে নিয়মবহির্ভূত ভাবে স্কুল দেরিতে খোলা ও আগেভাগে বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। আর এর পেছনে নাম জড়িয়েছে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সরকার ও স্কুলের করণিকের।
প্রতিদিন সকালবেলা স্কুলে আসার পরও ক্লাসরুমের বদলে গেটের বাইরে বসেই কাটাতে হচ্ছে পড়ুয়াদের! ছাত্রীরা ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলল, “আমরা ঠিক সময়ে আসি, কিন্তু স্কুল তো খোলে না! পড়াশোনা কীভাবে করব?” আরেকজন বলল, “এভাবে চললে পরীক্ষায় কীভাবে ভালো করব?”
অভিভাবকরাও ক্ষোভে ফুঁসছেন। এক অভিভাবকের আক্ষেপ, “আমরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাই শিক্ষার জন্য, কিন্তু এখানে তো স্কুলই সময়মতো খোলে না! প্রশাসন কি ঘুমিয়ে?”
এই অভিযোগের মুখে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সরকার অবশ্য নিজের দিক সামলানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি একা সব সামলাই, জরুরি কাজে কলকাতায় থাকায় সাময়িক সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
কিন্তু পড়ুয়াদের পাল্টা দাবি, “এটা কোনো এক দিনের ঘটনা নয়! দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই অনিয়ম। প্রধান শিক্ষক থাকলেও স্কুল খোলে না, না থাকলেও একই অবস্থা!”
প্রশ্ন উঠছে, যেখানে শিক্ষা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে, সেখানে যদি স্কুলের গেটেই তালা ঝুলে থাকে, তবে আগামী প্রজন্ম কী শিখবে?
অভিভাবক ও স্থানীয়দের দাবি, প্রধান শিক্ষক ও করণিকের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। ছাত্রছাত্রীরাও মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে বলেছে, “আমরা পড়তে চাই! আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না।”
এখন দেখার, প্রশাসন কবে ঘুম ভাঙিয়ে এই তালাবন্দি শিক্ষার ভবনকে স্বাভাবিক শিক্ষার আঙিনায় ফেরাতে পারে!