মালদহে প্রকাশ্য দিবালোকে শুট আউট

0
245

মালদহে প্রকাশ্য দিবালোকে শুট আউট। গুলি করে খুন তৃণমূল কাউন্সিলর ও প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুলাল সরকার।ঝলঝলিয়ার মহানন্দাপল্লী এলাকায় একটি বাইকে করে তিনজন গুলি চালায়।পরপর গুলি চালানো হয় তৃণমূল নেতাকে লক্ষ্য করে।একটি গুলি লাগে মাথায় ও আরও দুইটি শরীরে।সংকটজনক পরিস্থিতিতে আনা হল মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ সহ তৃনমুলের জেলা নেতৃত্ব মালদহ মেডিক্যাল কলেজে আসে।
মালদায় তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় রীতিমতো পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।নবান্ন থেকে এক্স হ্যান্ডেলে টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাবলা সরকার আমার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা ছিলেন । ওকে দুষ্কৃতীরা খুন করেছে । কি ভাষায় যে কথা বলব কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। বাবলার পরিবারকে আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। ওর স্ত্রী চৈতালি সরকার যেন মনকে শক্ত রেখে এগিয়ে চলুক ঈশ্বরের কাছে এই কামনা করছি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,প্রতিদিনের মতো এদিন সকালেও চার চাকা নিয়ে নিজের দোকানে আসছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময় ইংলিশ বাজার পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ঝলঝলিয়ার মহানন্দাপল্লী এলাকায় দোকানের কাছেই একটি মোটর বাইকে চারজন এসে তাকে গুলি করে। প্রথমে তাকে এক রাউন্ড গুলি করা হয়। প্রথম রাউন্ডের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপরই প্রাণ রক্ষার জন্য পাশের একটি দোকানে ঢুকে পড়েন বাবলা সরকার। এরপরই চারজন দুষ্কৃতী দোকানে ঢুকে তাকে তিন রাউন্ড গুলি করে। একটি গুলি মাথায় এবং দুটি শরীলে লাগে। সিসিটিভি ফুটেছে স্পষ্ট সেই ছবি দেখতে পেয়েছে পুলিশ। মুখ বাধা দুষ্কৃতীরা দোকানে ঢুকে একের পর এক গুলি করছে। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় বাবলা সরকারকে উদ্ধার করে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করে।
দুলাল সরকার আমার দীর্ঘদিনের সাথী ছিল,তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম লগ্ন থেকে বাবলা সরকার এবং তার স্ত্রী চৈতালি কঠোর পরিশ্রম করে মালদার সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তার নিরাপত্তা রক্ষী কেন সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল সেই প্রশ্নও তুলেছেন বাবলাবাবুর অনুগামীরা।
এদিকে এই ঘটনার পর গোটা এলাকা জুড়ে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে ঠিক সেইরকম শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে বাবলা সরকারের মৃত্যুর খবর পেয়ে মালদায় আসেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সেচ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন এবং শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তবে কেন গুলি করে খুন করা হলো বাবলা সরকারকে তা এখনো দ্বন্দ্বে রয়েছে সকলেই।
পুলিশকে বাবলা সরকারের গাড়ির চালক সুমন দাস জানিয়েছেন,প্রতিদিনের মতোই এদিন সকালে দাদাকে বাড়ি থেকে প্লাইউডের দোকান ও কারখানায় ছাড়তে গিয়েছিলাম। মহানন্দাপল্লীতে দাদার দোকানটি রয়েছে। দোকানের সামনে দাদা যখন গাড়ি থেকে বেড়াচ্ছিলেন তখনই চারজন দুষ্কৃতী একটি মোটরবাইকে এসে দাদাকে গুলি করে। প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তারপরেই বাবলাদা দৌড়ে দোকানে ঢুকে পড়ে। তখন দুষ্কৃতীরা পিছু ধাওয়া করে দাদাকে দোকানের মধ্যেই মাথায় গুলি করে খুন করে। আমি বাঁচাতে আসলে ওরা আমাকেও বন্দুক দেখিয়ে গুলি করার ভয় দেখায়, তখন প্রাণ ভরে সরে যায়।
মৃত বাবলা সরকারের স্ত্রী চৈতালি দেবী বলেন ,কেন এভাবে আমার স্বামীকে খুন করা হলো কিছু বুঝতে পারছি না।২০০৭ সালে স্বামীকে একবার দুষ্কৃতীরা গুলি করে মারার চেষ্টা চালিয়েছিল। তারপর দুইজন দেহরক্ষীও নেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে সেই দেহরক্ষী তুলে নেয় জেলা প্রশাসন। আজকে স্বামীর দেহরক্ষী থাকলে হয়তো ওকে হারাতাম না। এর জবাব পুলিশ কে দিতে হবে।
ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান তথা রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু নারায়ন চৌধুরী বলেন,দুলাল সরকারের রাজনৈতিক কোন শত্রু ছিল না। এর পেছনে অন্য কিছু রহস্য থাকতে পারে। পরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয়েছে তাকে। ভাবতেই পারছি না যে বাবলা সরকার নেই।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী বলেন,দুলাল সরকার আমাদের মধ্যে নেই ভাবতেই পারছি না। সাত সকালে দুষ্কৃতীদের এই তান্ডব দেখে রীতিমতো অবাক হচ্ছি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুরি বলেন , আসলে শাসকদলের যোগ্য নেতাদের কদর নেই । বাবলাবাবু অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। সাধারণ মানুষের জন্য অনেক উপকার করেছেন। অথচ তারই দেহরক্ষী তুলে নেওয়া হলো। অযোগ্যদের এখন একগাদা দেহরক্ষী দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আমরাও অসন্তুষ্ট। মানুষ এর বিচার করবে।
পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন,ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের মুখ ঢাকা ছিল বলে চিহ্নিত করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে গোটা এলাকায় নাকা তল্লাশি শুরু হয়েছে। আপাতত দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here